“আমি আমার বাবাকে চাই, আমার একটাই সন্তান!”—আহাজারি করতে করতে এই কথাগুলো বলছিলেন লিবিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে নিহত টিটু হাওলাদারের মা কুলসুম বেগম। ছেলেকে ইউরোপে পাঠানোর আশায় দালালের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ১৬ লাখ টাকা। কিন্তু অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যেতে গিয়ে ছেলের লাশই ফিরলো তাঁর কাছে।
শুধু টিটুর পরিবারই নয়, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার অন্তত ১০টি পরিবার আজ শোকে স্তব্ধ। লিবিয়া থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা নৌকা ডুবে প্রাণ গেছে ২৩ বাংলাদেশির, যাদের মধ্যে ১০ জনই রাজৈরের বাসিন্দা।
নিহতদের মধ্যে টিটু হাওলাদার (২৪) ও তাঁর মামা আবুল বাশার আকনও ছিলেন। ইতালি গিয়ে পরিবারের ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন ছিল তাঁদের। আবুল বাশার কয়েক মাস আগেই লিবিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন, পরে ভাগ্নে টিটু তাঁর পথ অনুসরণ করে। কিন্তু ২৫ জানুয়ারি লিবিয়া উপকূল থেকে যাত্রা করা ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি গভীর সমুদ্রে ডুবে যায়।
টিটুর বাবা হাসান হাওলাদার বলেন, “অনেক কষ্ট করে ছেলেকে বড় করেছি, ধারদেনা করে বিদেশ পাঠালাম। এখন ছেলেই নেই, আমি এ ঋণ কীভাবে শোধ করব?”
আবুল বাশারের বড় ভাই বাচ্চু আকন জানান, ভাই ও ভাগিনাকে ইতালি পাঠানোর জন্য দালালদের মোট ২৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। এখন তাঁদের লাশ ফেরত আনতে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
শুধু টিটুর পরিবার নয়, একইভাবে প্রতারিত হয়েছেন রাজৈর উপজেলার সুন্ধিকুড়ি গ্রামের সাগর বিশ্বাস, আশীষ কীর্তনীয়া, সাগর বাড়ৈ, শাখারপাড়ের সজীব মোল্লা, সাদবাড়িয়ার রাজীব হোসেন, বৌলগ্রামের অনুপ সরকার ও নৃপেন কীর্তনীয়া, গোবিন্দপুর গ্রামের ইনসান শেখ ও আবুল বাশারের পরিবারও।
রাজৈর থানার ওসি মো. মাসুদ হোসেন খান বলেন, “আমরা নিহতদের তালিকা তৈরি করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাচ্ছি, যাতে তাঁদের লাশ দেশে ফেরানো সম্ভব হয়। দালালদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, গত ২৫ জানুয়ারি ৫৬ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী নিয়ে নৌকাটি যাত্রা করেছিল। ২৮ থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ২৩ জনের মরদেহ উপকূলে ভেসে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, বেশিরভাগই বাংলাদেশি।
প্রতিবছর ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে হাজারো বাংলাদেশি দালালদের মাধ্যমে অবৈধ পথে লিবিয়া যান। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নিয়ে চলা নৌকাগুলোই হয় তাঁদের জন্য মৃত্যুকূপ।