মিথুন মজুমদার ঋত্বিক
ধারণা করা হয় বাংলাদেশে প্রায় ২৫০০ এর বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। এই সব প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ গুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বিভাগ। ২০১৬ সালে জুনে সাল নাগাদ,বাংলাদেশে ৪৫২ টি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের সন্ধান মিলেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ অনেক প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগই অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংসাবশেষ অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে এখনও অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান রয়েছে যেগুলোকে সঠিকভাবে খনন করা গেলে ইতিহাসের অনেক প্রামাণ্যচিত্র ও সংস্কৃতি উঠে আসবে। প্রত্নতত্ত্ব স্থানগুলোর মধ্য লতিকোট মুড়া বাংলাদেশের কুমিল্লায় অবস্থিত একটি প্রত্নস্থান।
লতিকোট মুড়া বাংলাদেশের কুমিল্লা সদরের কোটবাড়ি এলাকার এলাকায় অবস্থিত। একে লতিকোট বিহারও বলা হয় কারণ এখানে ২০০৩-২০০৬ খননের ফলে এখানে ৩৩ টি ভিক্ষুকক্ষ বিশিষ্ট ৪৭.২৪ মি × ৪৪.৮০ মি পরিমাপের একটি বৌদ্ধ বিহারের ভীত নকশা উন্মোচিত হয়।
এটির স্থানাঙ্ক প্রায় ২৩. ৪৩৮৬৬৯২° উত্তর এবং ৯১.১২৯২৯৮৫° পুর্ব। এর ধরন বৌদ্ধবিহারের মতো এবং এটি ময়নামতিরই একটি অংশ।
ধারণা করা হয় এটির প্রতিষ্ঠা ৮-১০ শতাব্দীতে এবং এটি বৌদ্ধ সংস্কৃতির ধারক বিহারটিতে প্রায় ২ টি নির্মাণ যুগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখানে একটি মন্ডপ নির্মাণ করা হয় দ্বিতীয় নির্মাণ যুগে পূর্ব বাহুর মাঝামাঝি স্থানে।
তবে অন্যান্য বৌদ্ধ বিহারের মতো কোন মন্দির এখানে নেই।
উত্তর দিকে ছিলো বিহার প্রবেশের প্রধান তোরন।
লতিকোট মুড়া উন্মোচিত স্থাপত্যশিলা হিসেবে বিবেচনা করা অষ্টম এবং দশম শতাব্দীর সময়কালকে। বৌদ্ধভিক্ষুরা এখানে পড়ালেখার জন্য বসবাস করতেন বলে জানা যায়। লতিকোট মুড়ার পাশে আরও ২ টি মুড়া রয়েছে যার একটি ইটাখোলা মুড়া অপরটি রুপবান মুড়া। এই তিনটি মুড়া কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকার বার্ড এবং বিজিবি গেটের মধ্যখানে অবস্থান করছে।
বর্তমানে মুড়াটির মালিক বাংলাদেশ সরকার এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। লতিকোট মুড়াতে সর্ব সাধারণের প্রবেশাধিকার রয়েছে।
তবে এই মুড়াটি বর্তমানে ধ্বংসাবশেষ অবস্থায় রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে এই লতিকোট বিহারে পর্যাপ্ত খনন ও গবেষণা করা হলে এই মাঝারি আকারের বৌদ্ধ বিহারটিই কোন ইতিহাসের দুয়ার উন্মোচন করার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণ এর মতে এই বিহারটি সরকার আরও যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করলে বাইরের স্থানগুলো অনেক দর্শনার্থী এই বিহারটি ভ্রমণে আসত।