কৃষক হারুন মিয়া। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের তারাগন এলাকায়। বাড়ির জায়গা ছাড়া আর কোনো জমি নেই তার। তবে জমি বর্গা নিয়ে উন্নত প্রযুক্তি আর উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান বীজে বীজতলা তৈরি করে চমক সৃষ্টি করেছেন তিনি।
চলতি আমন মৌসুমে বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ৫ লাখ টাকার বেশি আমন চারা বিক্রি করবেন বলে আশা তার। ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে তিনি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে চলছে আমন চারা বিক্রি। স্থানীয়দের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে কৃষকরা এসে চারা ক্রয় করছেন। ধান চারা বিক্রি করে ভাগ্য বদল হয়েছে তার।
কৃষক হারুন মিয়া বলেন, চলতি মৌসুমে বাণিজ্যিকভাবে আমন চারা বিক্রির লক্ষ্যে ৮ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে উন্নত হাইব্রিড জাতের ৩০ মণ ধানের বীজতলা তৈরি করি। এতে বর্গা নেয়া প্রতি বিঘা জমিতে জমা দিতে হয়েছে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ৪ মণ বীজ ধান দেওয়া হয়। হাল চাষ, জমা আর বীজ ধানসহ মোট প্রতি বিঘায় তার খরচ হয়েছে ১৮ হাজার টাকার উপরে। বীজতলা তৈরি করতে সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকারও বেশি। বর্তমানে চারা বিক্রি শুরু হয়েছে। কৃষকদের মাঝে আমন চারা বিঘা প্রতি ১হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করেছি।
তিনি আরো বলেন, গত ৩ দিনে ৭০ হাজার টাকার আমন চারা বিক্রি হয়েছে। কৃষকদের কাছে আমন চারার যে চাহিদা রয়েছে এতে আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যে সব চারা বিক্রি হবে। গত মৌসুমে শুধু আমন চারা বিক্রি করে ২ লাখ টাকা আয় করেছি।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমন আবাদে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। রোপণকৃত জমির মধ্যে উন্নতফলনশীল বীজসহ বিভিন্ন রকমের বীজ রয়েছে।
উপজেলার ধরখার এলাকার কৃষক লিটন মিয়া জানান, বন্যা ও অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে তাদের জমি তলিয়ে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। তাই জমি আবাদ করতে পৌর শহরের তারাগন থেকে ৪ বিঘা জমির চারা ৪ হাজার ৮০০ টাকায় ক্রয় করেন।
কৃষক শাহজাহান বলেন, আমাদের এলাকা নিচু হওয়ায় বেশীভাগ সময় জমিতে পানি থাকে। তাই জমি আবাদ করতে বীজতলা তৈরি করা যায় না। তাই ৫ বিঘা জমির চারা সংগ্রহ করতে হবে। এরইমধ্যে তারাগন থেকে ৩ বিঘা জমির চারা ক্রয় করা হয়েছে। বাকী জমি প্রস্তুত কাজ শেষ হলে সেখান থেকে নিয়ে ক্রয় করা হবে।
কৃষক মো: আবুল হোসেন বলেন, গত প্রায় ৪ বছর ধরে হারুন মিয়ার আমন চারা দিয়ে জমি আবাদ করছি। কৃষক হারুনের চারার মান খুবই ভালো। সেইসঙ্গে জমিতে ও ফলন ভালো হয়।
কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, নিচু এলাকার জমি হওয়ায় আমন মৌসুমে বীজতলা তৈরি করতে পারি না। তাই কেনা চারার ওপর তার নির্ভর করতে হয়। এ মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে আমন আবাদ করব। তাই চারা ক্রয় করেছি ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, এ উপজেলায় স্থানীয় কৃষকরা পুরোদমে আমন ধান আবাদ শুরু করছে। বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে নিম্ন এলাকায় পানি থাকায় অনেক কৃষক বীজতলা তৈরি করতে পারেন না। জমি আবাদ করতে তাদের চারা সংগ্রহ করতে হয়। অনেক কৃষক বাণিজ্যিকভাবে বীজতলা তৈরি করে চারা বিক্রি করছেন। এরমধ্যে কৃষক হারুন রয়েছেন। বর্তমানে চারার সংকট নেই। শেষ পযর্ন্ত যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে এ মৌসুমে আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।