এখন থেকে রাজধানীতে ভবন নির্মাণে উচ্চতার বিধিনিষেধ আর থাকছে না। তবে এলাকাভিত্তিক ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) ব্যবস্থা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় এলাকার নাগরিক সুবিধা ও রাস্তার প্রশস্ততা অনুযায়ী ভবনের আয়তন নির্ধারণ হবে।
ঢাকা মহানগরের জন্য নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে রাজউকের আওতাধীন এলাকায় আবাসিক ভবনের উচ্চতার ক্ষেত্রে আগের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। নতুন ড্যাপ ২০৩৫ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
মঙ্গলবার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে নতুন ড্যাপের অনুমোদনও দেয়। ফলে ২০১০ সালে পাস হওয়া পুরোনো অঞ্চল পরিকল্পনা বাতিল হলো।
এর আগে, ২০২০ সালে নতুন এই ড্যাপের একটি খসড়া প্রকাশ হয়েছিল। এতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আংশিক (১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার) এলাকায় ভবন নির্মাণে সর্বোচ্চ ৮তলা পর্যন্ত উচ্চতার কথা বলা হয়েছিল।
এ বিষয়ে ড্যাপ প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, নতুন ড্যাপে আবাসিক ভবনের সর্বোচ্চ উচ্চতা বা তলার বিধান রাখা হয়নি। তবে এলাকাভিত্তিক এফএআর নির্ধারণ করা হয়েছে। শহরের বসবাসের কথা বিবেচনা করে এমনটি করা হয়েছে। যেসব এলাকায় প্রশস্ত রাস্তা ও নাগরিক সুবিধা (পার্ক, উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রভৃতি) বেশি, সেসব এলাকায় বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা যাবে।
নগরবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ড্যাপে অনেক নতুন কৌশল যুক্ত হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে ঢাকা শহরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে রাজউকের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।
আগের ড্যাপে মোহাম্মদপুর এলাকায় বেড়িবাঁধের পশ্চিমাংশের পুরো অঞ্চল বন্যাপ্রবাহ এলাকা হিসেবে দেখানো হয়েছিল। ফলে ওই এলাকায় নির্মাণ করা ঢাকা উদ্যান হাউজিংসহ আশপাশে নির্মাণ করা কয়েক হাজার আবাসিক ভবন কাগজে-কলমে অবৈধ ছিল।
নতুন ড্যাপে ওই অঞ্চলকে এখন বন্যাপ্রবাহ এলাকা থেকে বাদ দিয়ে আবাসিক দেখানো হয়েছে। অবশ্য অনুমোদন না থাকায় ঐসব এলাকার ভবন মালিকদের জরিমানা দিতে হবে।
ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম জানান, জরিমানার হার কত হবে তা রাজউকের একটি কমিটি নির্ধারণ করবে।
জানা গেছে, নতুন ড্যাপে রাজউকের আওতাধীন এলাকাকে ৬টি প্রধান অঞ্চল ও ৭৫টি উপ–অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এতে জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও ব্লকভিত্তিক আবাসন ব্যবস্থা; মেট্রো ও রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল ও নদীবন্দরকেন্দ্রিক ট্রানজিটভিত্তিক উন্নয়ন; ভূমি পুনঃউন্নয়ন এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য সাশ্রয়ী আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন গণমাধ্যমকে বলেন, ড্যাপের কপি না পাওয়ায় তিনি বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে পারছেন না।
নতুন ড্যাপে উন্নয়ন স্বত্ব বিনিময়ের (টিডিআর) কৌশলও যুক্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এটি রাখা হয়েছে মূলত ব্যক্তিমালিকানাধীন কৃষিজমি ও জলাভূমি রক্ষার জন্য। ড্যাপে কোনো জমিকে কৃষি বা জলাভূমি হিসেবে চিহ্নিত করলে সেটি অন্য কোনো প্রকল্পে ব্যবহারের সুযোগ নেই।
এই ড্যাপে ঢাকায় জলপথকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ৫৭৪ কিলোমিটার নৌপথের উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রিত মিশ্র ভূমি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। ঢাকায় মোট এলাকার মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ উন্মুক্ত আছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।
এমন অবস্থায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ৫টি বৃহৎ আঞ্চলিক পার্ক, ৫৫টি জলকেন্দ্রিক পার্ক, ২৬টি পার্ক (ইকোপার্কসহ) নির্মাণ করা হবে।