চারতলা ভবনের ছাত্রাবাসের অধিকাংশ জায়গায় বড় বড় ফাটল। ছাদ ও বিমের পলেস্তারা খুলে বের হয়ে আছে রড। বাথরুমের পাইপ বেয়ে পড়ছে নোংরা পানি। এরই মধ্যে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর থেকে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায়, বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে এখানে থাকা শিক্ষার্থীদের। এতে যেকোনো সময়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এমনই বেহাল দশা মাদারীপুর সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসের।
জানা যায়, চারতলা ভবন বিশিষ্ট মাদারীপুর সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসটি ২৪ কক্ষ বিশিষ্ট। এখানে আবাসিক ছাত্রের সংখ্যা দেড় শতাধিক। ১৯৮৫ সালে নির্মিত হয় ভবনটি। ২০১৩ সালে সারাদেশের জরাজীর্ণ ভবন চিহ্নিত করা হয়। সেসময় এই ভবনটি এলজিইডির মাধ্যমে মৌখিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। পরে ভবনটি মেরামতের মাধ্যমে আরো কিছুদিন ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়। চলতি বছরের মে মাসে ছাত্রবাসটির নতুন হোস্টেল সুপার সাইদুর রহমান খান দায়িত্ব নেয়ার পরে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. জামান মিয়ার মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে ভবনটি সংস্কার ও বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান মাদারীপুরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে।
হোস্টেল সুপারের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাদারীপুরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুব্রত রায় ভবনটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে ২৬ মে ভবনটিকে মেরামত অযোগ্য হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে মাদারীপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর। পরে সতর্কতা বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে ছাত্রাবাসটিতে আবাসিক ছাত্রদের সংখ্যা ও চলাচল সীমিত করার জন্য বলা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, জরাজীর্ণ চারতলা ভবনটির বেশ কয়েকটি জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাটল। নিচ তলায় ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়ে দেয়ালে ঝুলানো কলেজ কর্তৃপক্ষের সতর্কবার্তা। এতে লেখা আছে, মাদারীপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর থেকে এই ছাত্রাবাসটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসিক ছাত্রদের ছাত্রাবাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন ও চলাচল সীমিতকরণ করতে বলা হলো।
ভবনটির পূর্ব পাশের চার তলার বাথরুমের ছাদ ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে থাকায় উপর থেকে পড়ে ময়লা পানি। এদিকে বেলকনির গ্রিলগুলো বাঁকা হয়ে গিয়েছে। কয়েকটি রুমের কোণার অংশের ছাদ ভেঙে বের হয়ে আছে রড। চারতলায় গিয়ে দেখা যায় পূর্ব ও পশ্চিম পাশের ৩টি পিলারের ঢালাই খুলে গিয়ে রড বের হয়ে আছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, এখানে বসবাসকারী অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এসেছে দূরের জেলা থেকে। বাইরের থাকতে খরচ বেশি হয়। খরচ বাঁচাতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে থাকতে হচ্ছে তাদের। ভবনটির প্রতিটি রুমের অবস্থাই বেহাল।
এ ছাত্রাবাসে বসবাসকারী শিক্ষার্থী রোমান মোল্লা বলেন, এ ভবনটি এখন বাসের অযোগ্য। পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ থেকে শুরু করে অধিকাংশ জেলার শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করতে আসে। ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পরেও নতুন ভবন না থাকার বাধ্য হয়েই আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে। একটি নতুন ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা করা হলে এ সমস্যা থাকবে না।
আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী মো. হাসান বলেন, চার মাসে আগে থেকেই এ ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন একটি ছাত্রাবাসের অভাবে এখানে আমরা প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছি। এছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। বাইরে অনেক খরচ, এত খরচ আমাদের কারো পক্ষে বহন করা সম্ভব না।
এ বিষয়ে মাদারীপুর সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসের হোস্টেল সুপার সাইদুর রহমান খান বলেন, এখানে বসবাসকারী ছাত্রদের অধিকাংশই দরিদ্র। আর্থিক সমস্যার কারণে বলা হলেও তারা হল ত্যাগ করছে না। আমি শুনেছি শীঘ্রই মাদারীপুর সরকারি কলেজে একটি নতুন ছাত্রাবাস হবে। এখানে একটি ছাত্রাবাস হওয়াটা খুবই জরুরি।
মাদারীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. জামান মিয়া বলেন, মাদারীপুর সরকারি কলেজে একটি নতুন ছাত্রাবাস অতি জরুরি। আমাদের ছাত্ররা পুরাতন ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে। আমরা ১০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি ছাত্রাবাস নির্মাণের দাবিতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর বরাবর চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করছি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে।
মাদারীপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর ইসলাম বলেন, মাদারীপুর সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসের চারতলা ভিত বিশিষ্ট একটি ১০০ শয্যা হোস্টেল ভবনের প্রাক্কলন প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দরপত্র আহ্বান করা হবে।