ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধলা বাজারের চাঞ্চল্যকর সোহাগ হত্যার আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।
রোববার দুপুরে বালিপাড়া ইউপির ধলা বাজারে সহস্রাধিক নারী পুরুষ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। পরে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে এলাকাবাসী। এ সময় মানববন্ধনে অংশ নেয়া নিহত সোহাগের স্ত্রীর আহাজারীতে ও বিচারের আর্তনাদে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।
গত রোববার রাতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ধলা বাজারে মন্দিরের পাশে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে সোহাগ নামে ওই যুবককে প্রকাশ্যে হত্যা করে বিশ্বাস, পল, রায়হান, শান্ত, শামীম, সাব্বিরসহ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
এ সময় এলাকাবাসী ফেরাতে আসলে বিশ্বাস অস্ত্র উচিয়ে তাদের হুমকি দেয়। ঘটনার পরদিন মামলা হলেও পুলিশ একজন আসামিকে আটক করলেও অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। দোষীদের গ্রেফতার ও কিশোর গ্যাংয়ের হাত থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ওই কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। তারা এমন কোনো অপরাধ নেই যা করে না। মাদক সেবন, টাকার বিনিময়ে অন্যের জমি দখল, নারী হয়রানি ও সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখানোসহ এ ধরনের অনেক অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যরা। এদের নিয়ে এলাকাবাসী আতঙ্কিত। এমন নৃশংসভাবে যেন আর কোনো মায়ের সন্তানকে জীবন দিতে না হয় সেজন্য এদের দ্রুত গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।
নিহত সোহাগের স্ত্রী মুন আক্তার এ সময় কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি সরকারের কাছে আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। আমার বাচ্চাটার ভবিষ্যৎ কি এখন? আমার জীবন অন্ধকার।’
নিহত সোহাগের বাবা শহিদুল্লা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার সংসার এখন কে চালায়? ছেলের উপার্জনের টাকাতেই আমার সংসার চলতো। আমার নাতির দুধ কে কিনে দিবে? আল্লাহ তুমি খুনিদের বিচার কর’।
এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ধলা গ্রাম ত্রিশাল, গফরগাঁও ও নান্দাইল উপজেলার সীমান্তবর্তী। এখানে উঠতি বয়সের কিশোরদের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। প্রায় প্রতিদিনই তুচ্ছ বিষয়ে তারা মারামারি, ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের ওপরও হামলা চালায় তারা। সোহাগকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে মারধরের সময় কেউ কেউ এগিয়ে যেতে চাইলে বিশ্বাস প্রকাশে অস্ত্র উচিয়ে তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এজন্য সোহাগকে বাঁচাতে পারিনি। আমরা আর কোনো সোহাগের মৃত্যু চাই না।
গত রোববার মধ্যরাতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় সোহাগ নামের ওই যুবককে। মৃত্যুর আগে তার ওপর হামলাকারীদের নাম বলে যান তিনি। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ওই ভিডিও সংগ্রহ করেছে ত্রিশাল থানা পুলিশ।
ভিডিওতে সোহাগ বলেন, বিশ্বাস, রায়হান ও পল তার ওপর হামলা করেছে। তাদের মধ্যে বিশ্বাস বেশি মারধর করেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আনিছ বলেন, আমরা এরই মধ্যে একজন আসামিকে গ্রেফতার করেছি। বাকীদের গ্রেফতারের জন্য তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাকীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। গ্রেফতারকৃত আসামি রহিম স্বীকারোক্তীমুলক জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার নির্মমতার বর্ণনা দেন।
তিনি বলেন, সোহাগকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে মারধর করে তার হাটু ও হাতের হাড়ের জোড়াগুলো ভেঙে দিয়ে দুপায়ে গুছ দেয়া হয়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর সোহাগের মৃত্যু হয়।
ত্রিশাল থানার ওসি মাইন উদ্দিন জানান, পূর্ব শত্রুতার জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এরই মধ্যে একজন আসামি গ্রেফতার হয়েছে। বাকীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।