শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে এশিয়া কাপ টি-২০ টুর্নামেন্ট শুরু করতে চায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি সরসারি দেখাবে বাংলাদেশ টেলিভিশন, গাজি টিভি ও নাগরিক টেলিভিশন।
এরইমধ্যে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকাকে ৮ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপের মিশন শুরু করেছে আফগানিস্তান। জয়ের ব্যবধানের চেয়ে বড় বিষয় ছিল শ্রীলংকার বিপক্ষে পুরো ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করেছে খেলেছে আফগানিস্তান। লংকানদের বিপক্ষে আফগানদের এমন জয় বাংলাদেশের জন্য বিশেষ এক সতর্কবার্তা।
কিন্তু আফগানিস্তানের এমন জয়ে মোটেও বিচলিত নয় বাংলাদেশ শিবির। সাকিব আল হাসানের অধিনায়কত্বে দল হিসেবে পারফর্ম করে নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে বদ্ধপরিকর এখন টাইগাররা।
আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ দলের চিত্র উঠেছে অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজের মুখে, ‘কে ভালো দল তা মাঠেই প্রমাণিত হবে।’ তিনি আরো বলেন,সব বিভাগে সবাই যখন ভালো খেলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা ম্যাচ জিতি, নিজেকে প্রমাণে দলের সবাই ভালো অবস্থায় আছে। তাই আমরা ভালো ফলের ব্যাপারে আশাবাদী।
এ ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের টি-২০ অধিনায়ক হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে নিজের শুরু করবেন সাকিব। এছাড়া বাংলাদেশের তৃতীয় টি-২০ ক্রিকেটার হিসেবে শততম ম্যাচ খেলতে নামবেন সাকিব। তার আগে দেশের হয়ে শততম ম্যাচ খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম।
নিঃসন্দেহে, নিজের মাইলফলক স্পর্শ করার ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখার চেষ্টা করবেন সাকিব। অধিনায়ক হিসেবে অনুপ্রাণিত হবার মত যথেষ্ট পরিসংখ্যান রয়েছে সাকিবের। ইতিমধ্যেই টি-২০ ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর মালিক হয়ে আছেন সাকিব। তার ঝুলিতে আছে ১২১টি উইকেট। আর ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক সাকিব। তার রান ২০১০। দেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান আছে সাবেক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ২,০৭০ রান তার ঝুড়িতে। মাহমুদউল্লাহকে টপকাতে ৬১ রান দরকার সাকিবের।
গত বছর টি-২০ বিশ্বকাপে হতাশাজনক বিদায়ের পর এই ফরম্যাটে ঘুড়ে দাঁড়াতে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় সাকিবকে। বিশ্বকাপের পর এ পর্যন্ত ১০ ম্যাচে মাত্র ২টিতে জিততে পেরেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে জিম্বাবুয়ের কাছে টাইগারদের প্রথমবারের মত দ্বিপাক্ষিক টি-২০ সিরিজ হার ছিলো।
এর আগে সাকিব বলেছেন, রাতারাতি কিছু পরিবর্তন করা যায় না। তবে বাংলাদেশের যেভাবে খেলা উচিত সেভাবে খেলার চেষ্টা করবে। সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের বড় দুর্বলতা কাটিয়ে দ্রুত রান তোলার দিকে ইঙ্গিত করেছেন নতুন অধিনায়ক।
বাংলাদেশের অনুশীলন ম্যাচ এবং প্রশিক্ষনে প্রমান মিলেছে , অতীতের চেয়ে বেশি ছক্কা মারার উপর বেশি মনোযোগ দিয়েছে তারা। এমনকি বড় ছক্কা মারতে সক্ষম এমনটাও জানিয়েছেন দলের ব্যাটাররা। আক্রমণাত্মক ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে না পারাই, এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের হারের প্রধান কারন বলে মনে করেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা।
মিরাজ বলেন, প্রথম ম্যাচ সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জয় দিয়ে শুরু করার ব্যাপারে আশাবাদী। আমাদের প্রতিপক্ষ কে, সেটা নিয়ে না ভেবে আমরা শুধুমাত্র আমাদের খেলায় মনোযোগ দিচ্ছি।
অন্য দিকে আফগান ব্যাটারদের কাছে ছক্কা হাকানো মোটেই সমস্যা নয়। প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী শ্রীলংকার বিপক্ষে আফগান ব্যাটারদের ছক্কা মারার দক্ষতা আরও বেশি ফুটে উঠেছে। যে কারণে সহজেই ম্যাচ জিতে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের রেকর্ডও বেশ ভালো। নয় ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতে জিতেছে আফগানিস্তান , তিনটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে।
এ বছর বাংলাদেশের মাটিতে দু’টি ম্যাচ খেলেছে দু’দল। দু’দলই একটি করে ম্যাচ জিতেছে। বাংলাদেশ যে কয়টি জিতেছে সেটি ছিলো ধীরগতির উইকেটে। তাই শারজাহ উইকেট যদি ধীরগতির হয়, তবে আফগান বিগ হিটারদের চেয়ে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। আর এটিই আফগানিস্তানের ভয়ংকর টি-২০ ফর্মের সামনে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখবে।
টুর্নামেন্টের আগে, ইনজুরির কারণে লিটন দাস-হাসান মাহমুদ এবং নুরুল হাসান সোহানের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু খেলোয়াড়কে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে লিটনকে হারানোয় বাংলাদেশের ওপেনিং স্লটে গুরুতর শূন্যতা তৈরি করেছে। ইতোমধ্যেই টিম ম্যানেজমেন্ট ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে ওপেনার হিসেবে এনামুল হক বিজয় এবং নাইম শেখকে খেলাবে। যদিও দু’জনকে টি-২০ ক্রিকেটের জন্য দুর্দান্ত ব্যাটার হিসেবে, বলা হয় না। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট স্পষ্ট করেছে, কীভাবে খেলতে হবে সে ব্যাপারে দু’জনকে নির্দিষ্ট ভূমিকা দেয়া হয়েছে। তবে এশিয়া কাপ সাকিবের অধিনায়কত্বে ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট খেলতে চায় বাংলাদেশ। আর এই ফরম্যাটে নতুনভাবে টি-২০ যুগের সূচনা করতে আগ্রহী সাকিব।
বাংলাদেশ দল :
সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক) আনামুল হক বিজয়, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), আফিফ হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, শেখ মাহেদি, মোহাম্মদ সাইফুউদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ, সাব্বির রহমান, মেহেদি হাসান মিরাজ, এবাদত হোসেন, পারভেজ ইমন, নাঈম শেখ এবং তাসকিন আহমেদ।
আফগানিস্তান দল :
মোহাম্মদ নবি (অধিনায়ক), নাজিবুল্লাহ জাদরান, আফসার জাজাই, আসমতউল্লাহ ওমরজাই, ফরিদ আহমদ, রহমানুল্লাহ গুরবাজ (উইকেটরক্ষক), ফজলহক ফারুকী, হাসমতউল্লাহ শাহিদি, হযরতউল্লাহ জাজাই, ইবরাহিম জাদরান, করিম জানাত, মুজিব উর রহমান, নাভিন উল হক, নূর আহমদ, রশিদ খান ও সামিউল্লাহ শেনওয়ারি।