ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় দেশীয় পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন বারি -৮ জাতের টমেটো চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন মো. মোস্তাকিম সরকার। গ্রাফটিং টমেটো চাষ করে তিনি শুধু নিজের ভাগ্য বদল করেননি পাল্টে দিয়েছেন গ্রামের চিত্রও।
এরইমধ্যে তার উৎপাদিত টমেটো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ মৌসুমে তিনি ১১ বিঘা জমিতে ২০-২২ লাখ টাকা উৎপাদিত টমেটো বিক্রির আশা করছেন।
সুষ্ঠু পরিকল্পনা, ইচ্ছাশক্তি আর শ্রম দিলে যে কোনো চাষ লাভজনক প্রতিষ্ঠানে গড়ে তোলা সম্ভব সেটাই প্রমাণ করেছেন উপজেলার মোগড়া ইউপির ধাতুরপহেলা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মোস্তাকিম। তিনি আদমপুর গ্রামে মায়ের দোয়া বহুমুখী নামে কৃষি খামার গড়ে তুলে এলাকায় চমক সৃষ্টি করেন।
মোস্তাকিম সরকার বলেন, গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ করতে ইজারাকৃত ১১ বিঘা জমিতে দেশীয় পদ্ধতিতে গ্রাফটিং ২৫ হাজার টমেটোর চারাগাছ রোপণ করি মৌলভীবাজার থেকে গ্রাফটিং পদ্ধতির ওইসব টমেটোর চারা ক্রয় করা হয়। প্রতি ১ বিঘায় জমি প্রস্তুত, চারা রোপণ, জমি ইজারা, পরিচর্যাসহ অন্যান্য খরচ বাদে তার খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ১১ বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করতে এ পর্যন্ত তার খরচ হয় ১১ লাখ টাকা।
এক মাস ধরে চলছে টমেটো বেচাকেনা। প্রতি কেজি টমেটো ৭০-৭৫ টাকা দরে দৈনিক ৮-১০ মণ টমেটো বিক্রি হচ্ছে। এই পর্যন্ত ৫ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছি।
এ মৌসুমে তিনি ২০-২২ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ও যাবতীয় খরচ বাদে ৮-১০ লাখ টাকা আয় হবে বলে জানান।
মোস্তাকিম বলেন, গ্রাফটিং চারা লাগানোর ৫০ দিনের মাথায় ফলন আসতে শুরু করে। এ পদ্ধতিতে টমেটো গাছ ঢলে পড়ছেনা সেই সঙ্গে তেমন রোগবালাই নেই। গ্রাফটিং জাতের টমেটোর ফলনও ভালো হয়। যেখানে অন্য সাধারণ একটি টমেটো গাছে ৩-৪ পাঁচ-কেজি টমেটো পাওয়া যায়, সেখানে গ্রাফটিং করা প্রতি গাছে ফলন মেলছে ১০-১২ কেজির বেশি।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাস্তার পাশে প্রতিটি গাছে ঝুলে আছে টমেটো। যে দিকে দৃষ্টি পড়ে জমিতে দেখা যায় কাঁচা-পাকা টমেটোয় ছেয়ে আছে পুরো মাঠ। রাস্তার পাশে এই প্রকল্পটি হওয়ায় সবার নজর কাড়ছে।
প্রবাস জীবন শেষে দেশে এসে আধুনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। কৃষি অফিস ও কৃষিবিদদের পরামর্শ এবং নিয়মিত ইউটিউব চ্যানেলে কৃষি সংক্রান্ত নানা বিষয় দেখে এ কাজে তার অনেক সহায়তা হয়। ৩ বছর ধরে তিনি জমি বর্গা নিয়ে সবজি চাষ করছেন। তিনি মৌসুম অনুযায়ী বছরজুড়ে তরমুজ, শসা, টমেটো, ঢেঁড়স, লাউ, বেগুন, বাউকুলসহ নানা প্রকার সবজি চাষ করে ভালো সফলতা অর্জন করেন। এদিকে সবজি চাষে ব্যপক সফলতা লাভ করায় তিনি এখন এলাকায় একজন সফল ও আদর্শ কৃষক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
স্ত্রী, ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে সুখেই দিনানিপাত করছেন। কৃষি কাজের জন্য ৫ জন শ্রমিক রয়েছে। তাদের দ্বারাই মূলত করা হচ্ছে ওইসব কাজ।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আফজাল হোসেন বলেন, মোস্তাকিমের আধুনিক সবজি চাষে স্থানীয়দের চোখ খুলে দিয়েছে। এখন ধান আবাদ না করে সবজি আবাদ করে ভালো টাকা উপার্জন করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের অনেক সুবিধা রয়েছে। গাছ বেশি দিন বেঁচে থাকে, গাছে রোগ বালাই কম থাকে, বীজ থেকে উৎপাদিত গাছের তুলনায় ঢলে পড়া রোগ অনেক কম হয়, গাছে ৬-৭ মাস পযর্ন্ত ফলন হয়, আগাম উৎপাদনের জন্য বারি – ৮ জাত চাষের জন্য উপযোগী, উৎপাদন দীর্ঘস্থায়ী ও ফলন বেশি হয়ে থাকে।
তিনি আরো বলেন, নানা প্রতিকুলতা অপেক্ষা করে কৃষক মোস্তাকিম সরকার কৃষিতে ভালো অবস্থান তৈরি করে বেশ সাফল্য অর্জন করেছেন। এ উপজেলায় অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষ করছেন। ফলন বৃদ্ধিতে সব সময় কৃষকদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।