নিষেধাজ্ঞার তিন মাস পর ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে সুন্দরবন। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ঘুরতে যাওয়া যাবে বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনে।
সুন্দরবনের করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, হিরণ পয়েন্ট, দুবলা ও নীলকমলসহ সমুদ্র তীরবর্তী এবং বনাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে লঞ্চ ও ট্রলারসহ বিভিন্ন নৌযানে চড়ে যেতে পারবেন পর্যটকরা।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, ১ সেপ্টেম্বর থেকে দেশ-বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন। একই সঙ্গে সুন্দরবনের বনজ সম্পদ আহরণের জন্য পাশ নিয়ে ওইদিন থেকে বনে প্রবেশ করতে পারবেন বনজীবীরা।
তিনি আরো জানান, গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের সব নদ-নদী ও খালে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল বন বিভাগ। এই তিন মাস সব ধরনের মাছ আহরণ বন্ধের পাশাপাশি সুন্দরবনে পর্যটকদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ, এ সময়টা বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুম। পর্যটকের আনাগোনা না থাকলে বন্যপ্রাণী তাদের প্রজনন ও বংশবিস্তার করতে বাধা পাবে না। এছাড়া বনের মৎস্যসম্পদের পাশাপাশি বন্যপ্রাণীর বংশবিস্তারে সুফল আনবে বলে ধারণা বনবিভাগ সহ সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, মৎস্যসম্পদ রক্ষায় ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানিংয়ের (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী প্রতি বছর এই মৌসুমে ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। ২০১৯ সাল থেকে এই কার্যক্রম চালু হয়েছে। কিন্ত চলতি বছর থেকে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এই প্রথম এক মাস বাড়িয়ে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাছ আহরণ বন্ধ রেখেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন পর্যটকরা। এজন্য বনের ওপর নির্ভরশীল জেলে, ট্যুর অপারেটর, লঞ্চ ও বোটচালকরা আগেভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সুন্দরবন করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, গত তিন মাস সুন্দরবনের পর্যটক আসা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বিকাল হলেই পর্যটক কেন্দ্রের সামনে চলে আসছে হরিণ-বানর। মানুষের আনাগোনা কম, তাই নদীর পাশে বা সামনে আসতে ভয় পেতো না এসব প্রাণী। তিন মাস পর্যটক আসা বন্ধ থাকায় সরকারের কিছুটা রাজস্ব কম হয়েছে। তবে তার চেয়ে বেশি উপকার হয়েছে বনজ সম্পদ ও বন্যপ্রাণীর।
তিনি আরো বলেন, জেলে প্রবেশ নিষেধ থাকায় যেমন বনের নদী ও খালে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বংশ বিস্তার লাভ করেছে, তেমনি প্রজনন মৌসুম তিন মাস পর্যটক বন্ধ থাকায় বন্যপ্রাণীর বংশবিস্তার বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও যেহেতু সরকারি নির্দেশনায় আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনের পাশ চালু হবে এবং বনের অভ্যন্তরে ও পর্যটক স্পটে ভ্রমণপিপাসুরা ঘুরতে আসবেন, সেজন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।