পাহাড়-সমুদ্রের নগরী চট্টগ্রামের পর্যটন ঘেরা উপজেলার একটি সীতাকুণ্ড। ৯ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী ইউনিয়ন হলো বাড়বকুণ্ড। ‘সীতাকুণ্ড’ নামের পেছনে যেমন রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস, তেমনি ‘বাড়বকুণ্ড’ নামকরণের পেছনেও রয়েছে বিশেষ কারণ। এখানে হাজার বছর ধরে রহস্যজনকভাবে পানির মধ্যেই দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। কারো মতে, এটি এক অভিশপ্ত কূপ। আবার কারো মতে, প্রাকৃতিক কারণ।
সীতাকুণ্ড সদর থেকে তিন মাইল দক্ষিণে ও সেখান থেকে এক মাইল পূর্বে পাহাড়ের ওপর রয়েছে একটি দ্বিতল মন্দির। মন্দিরটির নিম্নতলে রয়েছে একটি কূপ বা কুণ্ড। যেটি বাড়বকুণ্ড নামে পরিচিত। মন্দির ও কুণ্ডটিতে পূজা-স্নান করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। সেই থেকেই এলাকাটি বাড়বকুণ্ড নামে পরিচিতি লাভ করে।
তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য এ একটি কূপেরই দু’পাশের পানি দু’রকম। একপাশের পানি বেশ ঠান্ডা, অন্যপাশের পানিতে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। আর সেই পানি ঘিরেই যত চাঞ্চল্য। গরমের কারণে সেই পানির কাছে দাঁড়ানো মুশকিল হলেও হাতে নিলেই যেন উধাও হয়ে যায় তাপ। বিষয়টি যেমন অবাক করার মতো, আবার মজাও পান অনেকে।
কয়েকশ’ বছরের পুরোনো কালভৈরবী মন্দিরের পাশেই এ অগ্নিকুণ্ডের অবস্থান। অনেকের মতে, অগ্নিকুণ্ডটি হাজার বছরের পুরোনো। কিন্তু এটির মধ্যে জ্বলতে থাকা আগুনের রহস্য খুঁজতে গিয়ে মিলেছে নানা উত্তর। কেউ কেউ বলছেন এটি অভিশপ্ত একটি কূপ। আবার কেউ বলছেন প্রাকৃতিক কারণ।
প্রচলিত রয়েছে, প্রাচীনকালে দেব-দেবীর উদ্দেশে নর বলি দেওয়া হতো এ জায়গায়। এভাবে চলতে চলতে একদিন আগুন ধরে যায়। অনেক চেষ্টার পরও নেভানো যায়নি সেই আগুন। যা যুগ যুগ পেরিয়ে জ্বলছে এখনো। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে, এটি ধর্মীয় আশীর্বাদ।
জায়গাটিতে রয়েছে শত শত বছরের পুরোনো বেশ কিছু মন্দির। বিশেষ করে অগ্নিকুণ্ডটির পাশেই রয়েছে দুটি শিবমূর্তি কালভৈরবী মন্দির। যেগুলোর দেখাশোনায় নিয়োজিত রয়েছেন একজন পুরোহিত।
পুরোহিতের মতে, শিব ও পার্বতী ছিলেন স্বামী-স্ত্রী। পার্বতীর বাবা একদিন শিবকে অপমান করলে তা সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করেন পার্বতী। সেই খবর পেয়ে রাগে পার্বতীকে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেন শিব। এ কারণে তখন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল পৃথিবী। আর শিবকে শান্ত করতে ও পৃথিবীর ধ্বংস ঠেকাতে তার চক্র দিয়ে পার্বতীর শরীরকে ৫১ ভাগ করেন বিষ্ণু। যার একটি ভাগ পড়েছে বাড়বকুণ্ডের এ জায়গায়।
যদিও বিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। বিজ্ঞানের মতে, ব্রিটিশ আমলে এ পাহাড়ে মিলেছিল মিথেন গ্যাসের সন্ধান। কোনো এক কারণে সে সময় সীসা দিয়ে গ্যাস কূপের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই পানিতে জ্বলছে আগুন।
রহস্যময় এ কূপের বিষয়ে জানতে কথা হয় বাড়বকুণ্ডের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব আব্দুল হান্নানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই কূপটির মধ্যে আগুন জ্বলতে দেখে আসছি। শুনেছি এটি হাজার বছরের পুরোনো। এ কূপটিকে ঘিরে রয়েছে নানা রহস্য। কেউ বলেন অভিশপ্ত কূপ। আবার কেউ বলেন প্রাকৃতিক কারণে এমনটি হচ্ছে। কূপটি দেখতে নানা জায়গা থেকে বিভিন্ন বয়সী মানুষ ছুটে আসেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মন্দিরে পূজা ও কূপে স্নান করেন। এখানে স্নান করলে গঙ্গা স্নানের ফল হয় বলে তাদের বিশ্বাস।