সারা নুর
“আমার প্রিয় ক্যাম্পাস,আমার ক্যাম্পাস আমার দেশের পতাকার ন্যায় লাল-সবুজের ভরা,
এখানে প্রতিটি সকাল সূর্য ওঠে আগমনীর সুরে,
ভোর হয় স্নিগ্ধ বাতাসে”
শালবন বিহারের পাদদেশে লাল-সবুজে ঘেরা উপমধ্য-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৬ সালে দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে। প্রথমে ৭টি বিভাগে ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১৫ জন শিক্ষক দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ৬ টি অনুষদে ১৯ টি বিভাগ প্রায় ৬০০০ শিক্ষার্থী ও ২৬৪ জন শিক্ষক নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম চালু আছে।
লাল-পাহাড়ের বুকে সবুজ সমাহারে পরিপূর্ণ এই বিশ্ববিদ্যালয়। লাল-সবুজের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৃতির নানান রুপ দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে এই প্রাণের ক্যাম্পাসকে। প্রকৃতির এক এক ঋতুতে এক এক চিত্র ফুটিয়ে তোলে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে। কখনো কৃষ্ণচূড়া, জারুল অথবা কখনো কাশফুলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে এই বিদ্যাপীঠ। এই প্রকৃতি যেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে পর্যটকদের জন্য অন্যান্য একটি স্থান তৈরি করে। প্রতি বছর এসব ফুলের আগমনে পুরো ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে সবসময়। কখনও খবরের কাগজে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপার সৌন্দর্যের বর্ণনা পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দুর দুরান্ত থেকে ভ্রমণপ্রেমিকরা এখানে পাড়ি জমায়। ছোট ছোট টিলা আর সবুজে ঘেরা এই ক্যাম্পাস। এখানে আছে অনেক দর্শনীয় স্থান যা বিশ্ববিদ্যালয় কে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এর আয়তন ২৫০ একর। যা এই ক্যাম্পাসে আছে একটি শহীদ মিনার, একটি খেলার মাঠ, একটি বেডমিন্টন কোর্ট। মুক্ত মঞ্চ, কাঠাঁল তলা, পা চত্ত্বর যেখানে অনবরত শিক্ষার্থীরা আড্ডায় মেতে উঠে। নতুন করে আবার বৃত্ত সংঘটনের উদ্যোগে যোগ করা হয়েছে চিঠি চত্ত্বর। শিক্ষার্থীদের পদচারিত সবসময় মুখরিত এই প্রাণের ক্যাম্পাসটি। সন্ধ্যা নামলে শিক্ষার্থীরা গিটার নিয়ে দলবদ্ধভাবে গানের আসরে বসে যান। এভাবে কেটে যায় দিনের পর দিন। কেউ আবার ব্যস্ত হয়ে যান প্রেজেন্টেশন, টার্ম পেপার, এসাইনমেন্ট ও মিড নিয়ে এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি। যেন অনবরত ঝর্ণার মত চলন্ত রয়েছে এদিনগুলো। শিক্ষার্থীরা সহজে এই ক্যাম্পাসকে আপন করে নিয়েছে। এখানে বছরের পর বছর কেটে যায় হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন।
শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াশোনার বাইরেও বিভিন্ন সংস্কৃতি কর্মকাণ্ডে তাদের সংস্কৃতিচর্চাও দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠে বিভিন্ন সংগটন, যেমন প্রতিবর্তন, অনুপ্রাস, থিয়েটার, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেট সোসাইটি, ব্যান্ড প্ল্যাটফর্ম, স্বেচ্ছাসেবক রক্তদাতা বন্ধু সংঘটন, প্রথম আলো বন্ধু সভা, সাইন্স ক্লাব, সাংবাদিক সমিতিরসহ। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্র, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট। রোবট ‘সিনহা’ তৈরি করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ সুনাম, এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দেশে এবং দেশের বাইরে সুনাম অর্জন করেছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রমে এনেছে সুপরিবর্তন, যেখানে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত পাঠদানে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া শিক্ষকদের কে বিভিন্ন খেলাধুলায় ব্যাপারে আগ্রহ দেখা গিয়েছে। যা প্রতি বছর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার আন্তঃটুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়ে থাকে ।
কখনো কখনো ক্লাস পরীক্ষা ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়া। হয়তো কোনো একদিন এই সময়গুলো আমাদের স্মৃতি হয়ে থাকবে। এই স্মৃতিগুলো কোনো একসময় স্মরণ করিয়ে দেবে এই যৌবনের কথা। এছাড়া, একজন প্রকৃতি ও পাখি প্রেমী হিসেবে ক্যাম্পাসে কোকিলের ডাক, সবুজ গাছপালা ও ছোট ছোট টিলা, পাখির অভয়ারণ্য স্থান আমাদেরকে মুগ্ধ করে৷ এভাবে কেটে যায় আমাদের প্রাণের ক্যাম্পাসের দিনগুলো।