সময়ের ব্যবধানে জলজ্যান্ত স্মৃতিও নিজের সাথেই প্রতরণা করে । একসময়ের টকটকা রঙিন জীবন যেন ক্রমেই ধূসর চাদরে আবৃত হতে শুরু করে। আলো ঝলমলে রৌদ্রজ্জ্বল দিন গুলো যেন সব উবে যায় সময়ের নিষ্ঠুর আবর্তনে।
এই সময়ের ডানায় ভর করেই আবার একসময় স্মৃতি সব ফিরে পাই নিজের হারানো রূপ ও রঙ। প্রকৃতির অকৃত্রিম নিপুণ হাতের স্পর্শে নিজের আঙ্গিনার ধূসর ক্যানভাস আবার সেজে উঠে তার পূর্ণ যৌবনে। এমন ভাবেই নিজেকে প্রকৃতির রঙে বসন্তের পূর্ব ক্ষণে সাজিয়ে নিতে তিল পরিমাণ কৃপণতাও করে নি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়(বাকৃবি) ক্যাম্পাস। কেনই বা কৃপণতা করবে? কারণ তার বুকে ভর করে দীর্ঘ ৫ টি বছর যারা নিজেদেরকে তিলতিল করে গড়ে তুলেছে দেশ ও জাতির যোগ্য সন্তান হিসেবে , তারাই যে ফিরে আসছে নিজেদের শেষ বিদায়ের বার্তা নিয়ে। বলছিলাম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অষ্টম সমাবর্তন নিয়ে।
১২ ফেব্রুয়ারি রবিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অষ্টম সমাবর্তন। এই উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তার কৃতিসন্তানদের বরণ করে নিতে যেন সেজেছে অপরুপ সাজে। বসন্তের পূর্বক্ষণে সমাবর্তন অনুষ্ঠিন হওয়ায় ক্যাম্পাসের প্রতিটা অলিগলি মঁ মঁ করছে বাহারি রঙের দেশি-বিদেশি ফুলের গন্ধে । ক্যাম্পাসের প্রতিটা ভবন, করিডোর, চত্বর, টিএসসি, আবাসিক হল ,একাডেমিক ভবন সাজানো হয়েছে চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জায়। বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে শিক্ষক কমপ্লেক্স, জব্বারের মোড় থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিটি কোণা ঝলমল করছে বাহারি রঙের চোখ ধাধানো আলোয়।
দেবদারু গাছের ঝারবাতির আলোর ছোয়া যেন অন্যরকম মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করছে। মূল সমাবর্তনের আগে কয়েকদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের গাউন, ক্যাপ দেয়। কে কত রকমভাবে তাদের আনন্দ অন্যকে জানান দিতে পারেন সে মহোৎসবে মেতে উঠেন সবাই। সমাবর্তনের আরেক নাম হয়ে উঠে উল্লাস আর উদযাপন। শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনের আগেই যোগ দেন জীবনের নতুন ধাপে। কর্পোরেট কর্মযজ্ঞে। কিন্তু সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে ঘিরে তার আবারও ফিরে আসেন সেই চিরচেনা ক্যাম্পাসে নিজের মাতৃকোলে। দিনটাকে উপভোগ করেন নিজেদের মতো করে।
ছবি তোলার মহাযজ্ঞে মেতে ওঠেন সবাই। বিশেষ এ দিনটির পুরোটাই যেন ধরে রাখতে চান ক্যামেরার ছোট্ট পরিসরে। একদিকে দীর্ঘদিন পর একত্রে মিলিত হতে পারার আনন্দ, অন্যদিকে আবারও কর্পোরেট জীবনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে একটুখানি সতেজতায় নিজেকে রাঙিয়ে নেয়া। তাদের জীবনে আর একটু আনন্দ বাড়িয়ে দিতেই ক্যাম্পাসের এই সাজসজ্জা। ক্যাম্পাসের প্রতিটা কোণা যেন নিজেকে রাঙিয়েছে আপন রঙে।
ক্যাম্পাসের ইট-পাথরে,আলো-বাতাসে যেন একটা কথার প্রতিধ্বনিই মুহূর্মূহু ধ্বনিত হচ্ছে যে, হে আমার সন্তানেরা আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি তোমাদের পরম মমতা ও মায়া দিয়ে জড়িয়ে নিতে। তোমাদের বরণে আজ আমি সেজেছি রঙধনু রঙে। তোমাদের জন্যই রঙ ফিরে পেয়েছে আমার ধূসর আঙ্গিনায়।
মো: লিখন ইসলাম শিক্ষার্থী,
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।