কানজুল কারাম কৌষিক
বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’ প্রতিপাদ্যে এবছর নতুন বাংলা সন কে স্বাগত জানাতে ১৪৩০ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখে আনন্দে মাতবে সারা দেশ। বাংলা নববর্ষ উদযাপনে এবারো মঙ্গল শোভাযাত্রা সহ নানারকম বাহারি আয়োজন নিয়ে প্রস্তুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ।
গতবছর করোনা মহামারি প্রভাবের পরে সীমিত আকারে শোভাযাত্রা বের হয়েছিলো। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় ঢাকাবাসী রাজপথে নামবে উৎসব ও আনন্দের মঙ্গল শোভাযাত্রায়।এবছর মঙ্গল শোভাযাত্রা চারুকলা অনুষদ থেকে সকাল ৯টায় বের করা হবে।মঙ্গল শোভাযাত্রা শাহবাগ মোড় হয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে।
প্রতিবছরই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের দায়িত্বে থাকেন চারুকলা অনুষদের নির্ধারিত কোন ব্যাচ। এ বছর দায়িত্বে আছেন চারুকলা অনুষদের ২৪ তম ব্যাচ। তারা এবার বাংলার ঐতিহ্য ফুল, পাখি, ঘোরা, টেপা পুতুল ও নতুন সংযোজন নীল গাই সহ মোট ৬ টি মোটিভ নিয়ে স্ট্রাকচার বানানোর কাজ করছেন। বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ঘুরে দেখা যায়, মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতির কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। তীব্র তাপদাহে অলস বিকেলেও কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা।চারুকলার মেইন গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় জয়নুল গ্যালারিতে চারুকলা অনুষদের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের আঁকা ছবির প্রদর্শনী এবং সেগুলো কেনাবেচাও হচ্ছে। সেখানে বসেই ছবি আঁকছেন একদল শিক্ষার্থী। জলরঙ ও অ্যাক্রেলিকে বিভিন্ন আকার ও রকমের চিত্রকর্ম আঁকছেন তারা।
আরেক দল শিক্ষার্থী ব্যস্ত সরাচিত্র নিয়ে। মাটির সরায় নানা রঙে কেউ ফুটিয়ে তুলছেন গ্রামের দৃশ্য, কেউবা আঁকছেন ফুল-লতাপাতাসহ নানা ধরনের নকশা। চারুকলার জয়নুল স্কুল ঘরে বেশ ক’জন শিক্ষার্থী মাউনবোর্ড দিয়ে ছোট ছোট পাখি বানাচ্ছেন। একইসঙ্গে তাতে রঙ লাগানো হচ্ছে। হাতপাখা, চরকি,মুখোষ সহ নানারকম জিনিস রঙ করছিলেন ড্রয়িং এন্ড পেইন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী নয়ন। তিনি বলেন, আমরা প্রায় ২০ দিন যাবত প্রস্তুতির কাজ করছি। এখন কাজ প্রায় শেষ। আয়োজক ব্যাচের পাশাপাশি চারুকলার সাবেক বর্তমান বহু শিক্ষার্থী আমরা একসাথে কাজ করছি। রাজা-রাণীর মুখোশ তৈরী নিয়ে কাজ করছিলেন চারুকলা ২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ। তিনি আয়োজনের ব্যাপারে জানান, এবারের আয়োজনকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে- স্ট্রাকচার, পাখির অরিগামি, রাজা-রাণী মুখোশ এবং সরাচিত্র ও পেন্টিং।
আমরা কাজ করছি রাজা-রানির মুখোস সহ বিভিন্ন মুখোশ নিয়ে। আশা করি আজকে রাত ১০ টার মধ্যেই আমাদের প্রস্তুতির কাজ সমাপ্ত হবে। এদিকে দেশজুড়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে হচ্ছে নানারকম সমালোচনা। শোভাযাত্রা বন্ধ করার জন্য আইনি নোটিশ থেকে শুরু করে চিরকুটের মাধ্যমে অজ্ঞাত গোষ্ঠীর হুমকিও এসেছে। এ ব্যাপারে এবারের আয়োজক ব্যাচের একজন আহ্বায়ক ওম প্রকাশ নব প্রভাত কে জানান, প্রতিবারই মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধের লক্ষে মৌলবাদীরা চেষ্টা করে। আমরা তাদের প্ররোচনায় আমাদের উদযাপনের কমতি রাখব না। রমজান মাস উপলক্ষে হয়ত আয়োজন একটু কম থাকবে, সময় সংক্ষিপ্ত থাকবে কিন্তু উদযাপনের কোন কমতি থাকবে না। সবসময়ের মতই স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শোভাযাত্রা হবে। এদিকে, এখনো চারুকলা প্রাঙ্গনে অন্যান্য বছরের তুলনায় জনসমাগম দেখা যায় নি।
চারুকলায় খেলনা গাড়ি, বাঁশি, চড়কি সহ বিভিন্ন রঙিন খেলনা নিয়ে গাছতলায় বসে ছিলেন মো: ফারুক মিয়া। তিনি বলেন, আমি প্রায় ১২ বছর যাবৎ চারুকলায় মেলা নিয়া বসি। এবার রমজান মাস হওয়ায় মানুষ কম। অন্য সময় হইলে আপনার সাথে কথা কইবার সময় পাইতাম না, এতো বেচাবিক্রি হইত। পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানায় শোভাযাত্রা উদযাপন কমিটি। এদিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদের তৈরি মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। নববর্ষের দিন নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করে তা মনিটরিং করার জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ক্যাম্পাসে নববর্ষের দিন সব ধরনের অনুষ্ঠান বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে অপরাহ্ন ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে।এরপর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না
।নববর্ষের আগের দিন ১৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেট ব্যবহার করতে পারবেন।