মো আমান উল্লাহ, বাকৃবি প্রতিনিধি
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি একটি গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীতে উন্নত দেশগুলোতে ফসলের অধিক উৎপাদনের জন্য উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও প্রচলিত প্রযুক্তিতে ফসল ফলানো এবং সংগ্রহ করা হয়। এমনকি কৃষিজাত ফসল সংগ্রহের পর সঠিক প্রযুক্তির অভাবে দীর্ঘদিন তা সংরক্ষণ করা যায় না। এর ফলে দেশে বছরে প্রচুর পরিমাণে ফসল নষ্ট হয়। দেশে অধিক উৎপাদন এবং ফসল সংগ্রহের পর দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য মাঠ পর্যায়ে বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) একদল গবেষক।
বুধবার (০৯ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে ঢাকার লেকশোর হোটেলের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত দুইদিন ব্যাপি আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান এপ্রোপ্রিয়েট স্কেল মেকানাইজেশন ইনোভেশন হাব (আসমি) বাংলাদেশ ও পোস্ট-হারভেস্ট লস রিডাকশন ইনোভেশন ল্যাব (ফিলিল) বাংলাদেশ ফেজ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং বাকৃবির কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মঞ্জুরুল আলম। সিম্পোজিয়ামের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘বাংলাদেশের কৃষির রুপান্তর: উপযুক্ত পরিমাপে যান্ত্রিকীকরণ ও ফসল কর্তন পরবর্তী অপচয় কমানোর উদ্ভাবনসমূহের ভূমিকা’।
মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারিত প্রযুক্তিগুলো হলো আসমি প্রজেক্টের ধান কাটা, মাড়াই ও প্যাকেজিং যন্ত্র কম্বাইন হার্ভেস্টর, ধান কাটার যন্ত্র রাইস রিপার, ধানের বীজ বপন করার যন্ত্র রাইস সিডার, চারা লাগানোর যন্ত্র রাইস ট্রান্সপ্লান্টার। এছাড়া ফসল সংগ্রহের পর ফসলকে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য বাউ ড্রায়ার, বায়ুরোধী হারমেটিক ব্যাগ ও হারমেটিক কোকুন।
সিম্পোজিয়ামে মুখ্য প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় ড. মঞ্জুরুল আলম আরও বলেন, কৃষি প্রযুক্তিগুলো আমাদের দেশের উপযোগী করে তৈরী করা হয়েছে যেন কৃষকরা খুব সহজে এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে এবং খরচও কম হয়। এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কৃষকরা যেমন লাভবান হবে তেমনি ভোক্তারাও লাভবান হবে। কারণ কৃষকরা কম খরচে এবং কম সময়ে ফসল উৎপাদন করলে ভোক্তারও কম দামে কৃষি পণ্য পানে। এছাড়াও এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষক দীর্ঘদিন ফসলের কোন ক্ষতি ছাড়ায় সংরক্ষণ করতে পারবে।
সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সেমিনারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের প্রধান কিউরেটর মো. নজরুল ইসলাম খান, আমেরিকার কানসাস স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিড দি ফিউচার ইনোভেশন ল্যাব ফর দি রিডাকশন অফ পোস্টহারভেস্ট লস প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক ড. জেগার হার্ভে, আমেরিকার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এপ্রোপ্রিয়েট স্কেল মেকানাইজেশন কনসোর্টিয়ামের (এএসএমসি) পরিচালক ড. প্রশান্ত কে. কালিতা এবং কানসাস স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিড দি ফিউচার ইনোভেশন ল্যাব ফর কলাবোরেটিভ রিসার্চ অন সাসটেইনেবল ইনটেনসিফিকেশনের (সিল) পরিচালক ড. পি. ভি. ভারা প্রসাদ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সিম্পোজিয়ামে এপ্রোপ্রিয়েট স্কেল মেকানাইজেশন এন্ড পোস্টহারভেস্ট লস রিডাকশন ইনোভেশনস সংক্রান্ত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্পের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. চয়ন কুমার সাহা। সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন ফিলিল বাংলাদেশ ফেজ-২ প্রকল্পের নিযুক্ত উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি ও বাকৃবির কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বিলাস কান্তি বালা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. দীপু মনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে ফসল উৎপাদন, সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করার জন্য এই আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রাখবে। গবেষণা ও উন্নয়নের সুবিধা দিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কাজে এগিয়ে আসবে যা শিক্ষাক্ষেত্রে জাতীয় ও আঞ্চলিক সমস্যার সমাধানের দিকে নিয়ে যাবে এবং পরবর্তী গবেষণার সহায়তা করবে।