বেরোবিপ্রতিনিধি, আল আমিন
কুয়াশার চাদরে ডাকা স্নিগ্ধ ভোর, সবুজ ঘাসের ডগায় জমা বিন্দু বিন্দু শিশিরকণা। শিউলি আর বকুলের মিষ্টি গন্ধের মোহনীয়তায় মত্ত ভোরের প্রথম প্রহর। আর এমন দৃশ্যই মনে করিয়ে দেয় হেমন্ত এসে কড়া নাড়ছে বাঙালির দরজায়।
শরতের কাশফুলের পরপরই আগমন ঘটে হেমন্তের। স্নিগ্ধ হেমন্তের এমন অপরূপ সৌন্দর্য স্বভাবতই আকৃষ্ট করে প্রতিটি প্রকৃতি প্রেমিকে। স্বচ্ছ মেঘমুক্ত আকাশ আর সেই সঙ্গে গাছের পাতার ফাঁকে গলেপড়া ভোরের সোনালি আলো এ যেন প্রকৃতিকে মোহনীয় করতে অতিরিক্ত এক উপকরণ। মনে হয় যেন প্রকৃতি আজ সেজেছে আপন মনে।গাছের পাতায় জমে থাকা প্রতিটি শিশিরকণা সোনালি আলোয় মুক্তোর দানা হয়ে জ্বলে ওঠে জানান দেয় হেমন্তের আরেক ঝলক সৌন্দর্যের।
শিউলি, কামিনী, গন্ধরাজ, মলিস্নকা, ছাতিম, দেবকাঞ্চন, হিমঝুরি প্রকৃতিকে করেছে আরো, বেশি মনোমুগ্ধকর।
কবি সুফিয়া কামাল হেমন্তের রূপ বর্ণনায় বলেছেন-
‘সবুজ পাতার খামের ভেতর
হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে
\হকোন পাথারের ওপার থেকে
আনল ডেকে হেমন্তকে?’
বাংলা বর্ষের ষড়চক্রের চতুর্থ ঋতু হেমন্তের আগমন কার্তিকের সঙ্গে হলেও ব্যাপ্তিটা অগ্রহায়ণের শেষ অবধি। ‘কৃত্তিকা’ ও ‘আর্দ্রা’ এ দুটি তারার নামেই হয়েছে কার্তিক ও অগ্রহায়ণের নাম। শুভ্র শরতের পর শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে হেমন্ত। তাই হেমন্তকে শীতের পূর্বাভাসও বলা চলে। বাঙালি সংস্কৃতি ও ইতিহাসেও রয়েছে হেমন্তের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অগ্র ও হায়ণ শব্দ দ্বারা মূলত ‘ধান’ ও ‘কাটার মৌসুম’ বুঝায়। তাই তো সম্রাট আকবর খাজনা আদায়ের জন্য অগ্রহায়ণকেই বাংলা সনের প্রথম মাস হিসেবে ঘোষণা করে ছিলেন।
হেমন্তের ফুলেরা রঙ-রূপ-গন্ধে জাদুমুগ্ধ করে রাখে সৌন্দর্য পিয়াসীদের। মনোলোভা মল্লিকা, হিমঝুরি, দেবকাঞ্চন আর রাজ-অশোকের হৃদয়কাড়া রঙে, মনমাতানো রূপে প্রাণচাঞ্চল্য বয়ে যায় হৃদয়ের গভীরে। গভীর রাতে ছাতিমের উদ্দাম তীব্র গন্ধের প্লাবনে আনমনা হয়ে ওঠে মন। কামিনী আর গন্ধরাজের উদাস করা সুবাসে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে মন। দোলনচাঁপাও তার অদ্ভুত সুগন্ধে বিমোহিত করে রাখে অনুক্ষণ। আর কুয়াশাচ্ছন্ন সকালের মিষ্টি রোদে ওম মাখানো ছড়িয়ে থাকা শেফালি ফুলেরা ভাবুক হৃদয়ে ঝড় তোলে মুগ্ধতার ছোঁয়ায় আর ভালোবাসার অসীম মমতায়।
হেমন্তের ক্যাম্পাস যেনো,ভিন্ন ধরনের অনুভূতির সৃষ্টি করে, শিউলি বকুল এর সুবাসে মৌ মৌ করে চারিদিক, ক্যাম্পাসের বিজয় সড়ক,দেবদারু রোড, কৃষ্ণচূড়া রাস্তাগুলো যেন নতুন রূপে সাথে। কিছুটা কুয়াশা তৈরি করে ধূসর বর্ণ,সবার মন যেন হারিয়ে যেতে চাই এক অজানা মায়ায়।ক্যাম্পাসে যেন তৈরি হয়েছে স্বর্গের এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
এভাবেই,ভিন্ন রঙে রাঙিয়ে তুলে, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।