ঢাবি, প্রতিনিধি
২০১৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর স্বপ্নবাজ ও সংস্কৃতিমনা কিছু তরুণদের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ'( ডিইউসিএস)। আজ সংগঠনটির সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
‘অন্বেষণেই উদ্ভাসন’- স্লোগানকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছে এ সংগঠনটি। আর প্রত্যয় শুদ্ধ বাংলা সংস্কৃতি চর্চা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানান সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম আঁতুড়ঘর হয়ে ওঠে সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সংগঠনটি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করেছে যা মুখর হয়ে হয়ে উঠেছে সদস্যবৃন্দের সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তিসহ ভিন্নধর্মী নিজস্ব পরিবেশনায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিচালিত এ সংগঠনটি বর্তমানে ছয় শতাধিক সদস্যের সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ’ কর্তৃক আয়োজিত নানান অনুষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান হিসেবে প্রতিবছর বসন্ত উৎসব আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে পুতুলনাচ, বায়োস্কোপ, সাপের খেলা, বানর নাচ ও লাঠিখেলার মত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও লোকজ ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রথম সারির নাট্যদলের অংশগ্রহণে প্রতিবছর ‘নাট্য উৎসব’ আয়োজন করে থাকে সংগঠনটি যেখানে তিন নাট্যকর্মীকে প্রদান করা হয় নাট্যজন সম্মাননা। শোকের মাস আগস্ট জুড়ে চলে ‘বঙ্গবন্ধুকে চিঠি লেখা প্রতিযোগিতা’। এছাড়া মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী, পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন বিশেষ দিবসে নানা আয়োজন ও পরিবেশনা থাকে। বিভিন্ন সময় ভারত, চীন, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিয়ে অংশ নিয়েছে সংগঠনটি, কুড়িয়েছে প্রশংসাও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা অন্মেষণ ও বিকাশ ঘটানোর প্রয়াসে বিভিন্ন সময়ে ‘অন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা’র আয়োজনও করেছে সংগঠনটি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক উৎসব ও প্রতিযোগিতা ও দুই বাংলার সাংস্কৃতিক উৎসব গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিবেশনা করে সুনাম অর্জন করেছেন সংগঠনের সদস্যরা।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সংগঠনটির মডারেটর হিসেবে আছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী। বর্তমানে সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সাদিয়া আশরাফি থিজবী। আর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন জয় দাস।
সংগঠনটির ৮ম বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে সংগঠনটির বর্তমান ও প্রথম নারী সভাপতি সাদিয়া আশরাফী থিজবী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ সবসময়ই শুদ্ধ বাংলা সংস্কৃতির চর্চা করে। আমরা নিরপেক্ষ না; আমরা একটি পক্ষে অবস্থান করি। আমরা বাংলা সংস্কৃতির পক্ষে; আমরা বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পক্ষে।
২০১৫ সালে আমাদের সংগঠন প্রতিষ্ঠালাভ হয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই যখনই কোন অন্যায় হয়েছে, নিপীড়ন হয়েছে, আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমাদের প্রতিবাদের হাতিয়ার সংস্কৃতি। সংস্কৃতির মাধ্যমেই আমরা জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, মাদকাসক্তির মতো ঘৃণ্য অপকর্মকে রুখে দিতে চাই”।
সাধারণ সম্পাদক জয় দাস বলেন, “সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে মানুষের চিন্তা চেতনা পরিশুদ্ধ হয়। সাংস্কৃতিক চর্চা মানুষের মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্যেও প্রয়োজন৷ এছাড়াও সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে ইতিহাস-সামাজিক ব্যবস্থার রূপ তুলে ধরা যায় এবং সমসাময়িক নেতিবাচক ঘটনার প্রতিবাদ জানানোও যায়৷ তাই আমাদের শুদ্ধ সাংস্কৃতিক চর্চা অব্যহত থাকবে”।
‘অন্বেষণই উদ্ভাসন’ -স্লোগানকে সামনে রেখে শুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চা যেন অব্যাহত থাকে – প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে এমনটাই আশা এ সংগঠনের সদস্যদের। বাংলা সংস্কৃতিকে লালন করার মধ্য দিয়ে সকল ধরনের সাম্প্রদায়িকতা রুখে দেয়া সম্ভব বলে বিশ্বাস এই তরুণদের।