আতিকুর রহমান বাবু
কিশোরগঞ্জের মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করলেও কঠিন পরিস্থিতি তাঁকে পরিণত করেছে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। ২০২১ সালে ড্যাফোডিলে চাকরিতে যোগ দেন তাজুল। তবে ২০২৪ সালে তাঁর স্ত্রীর জটিল অপারেশনের জন্য প্রয়োজন হয় বড় অঙ্কের টাকা। যেটির জোগাড়ে হিমশিম খেতে হয় তাজুল ইসলামের। মাসিক ১১ হাজার টাকার বেতনে থাকা-খাওয়া চালিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ বহন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় তাজুলের জীবনে।
এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের হতে ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। অবশেষে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর হলের সামনে ছোট্ট একটি টেবিলে সিদ্ধ মুরগি, হাঁস ও কোয়েলের ডিম বিক্রি শুরু করেন তিনি। দুই মাসের মধ্যে ডিম বিক্রি থেকে অর্জিত আয়ে তিনি স্ত্রীর অপারেশনের খরচ জোগাড় করতে সক্ষম হন। অপারেশনের খরচে বাবার পাশাপাশি শ্বশুরও তাকে আর্থিক সহযোগিতা করেন বলেন জানান।
তাজুল জানান, স্ত্রী অসুস্থ থাকার সময় অনেক বড় বিপদের সম্মুখীন হন তিনি, সমস্যা সমাধানে উপায়ান্তু না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের সামনে ডিউটি শেষে ডিম ব্যবসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি এবং এক সময় বনে যান সফল উদ্যোক্তা। তাজুল ইসলাম তার স্ত্রী’র বিষয় নিয়ে আরও জানান, বর্তমানে তার স্ত্রী সুস্থ রয়েছেন, তবে নিয়মিত ওষুধ খেতে হচ্ছে তাকে।
ব্যবসা সম্পর্কে তিনি বলেন, “আল্লাহর রহমতে ব্যবসা ভালোই চলছে। দৈনিক প্রায় আড়াইশো ডিম বিক্রি হয়, যার মাধ্যমে দিনে এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হয় অনেক সময় এর বেশিও হয়।” ডিম বিক্রির শুরু থেকে সহকর্মীরা তাকে অনেক উৎসাহ দিয়ে আসছেন। তাজুল বিশেষভাবে ড্যাফোডিলের অ্যাকাউন্ট অফিসার রাসেলের কথা উল্লেখ করে বলেন, “তিনি আমাকে অনেক সাহস দিয়েছেন। ছাত্ররাও অনেক ভালো, তারা আমার খোঁজখবর রাখে এবং কোনো সমস্যা হলে সহযোগিতা করতে চায়।
”বর্তমানে তাজুল ইসলাম নিজের কাজের পাশাপাশি ব্যবসাও চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমার স্ত্রী এখন বিপদমুক্ত তবে তার চিকিৎসা চলমান রয়েছে। সব কিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ। তিনি আরও জানান যারা আমাকে উৎসাহ ও সহযোগিতা করেছেন, তাদের সবার প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ।”
তাজুল ইসলামের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী সিয়াম বলেন, “নিশ্চয়ই তাজুল ভাইয়ের উদ্যোগটি অনেক ভালো। আমি মনে করি এতে ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণা জোগাবে কারণ দেশে বেকারত্বের এই সময়ে এমন উদ্যোক্তা হওয়া অনেক প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা এতে উদ্যোক্তা হওয়ার অনুপ্রেরণা পাবেন।
“এনএফই ডিপার্টমেন্টের নারী শিক্ষার্থী খাদিজা জানান, “তাজুল ভাই এই কাজটি উনাকে একজন উদ্যোক্তার পাশাপাশি উনার মহান ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে। যেখানে উনি সারাদিন পরিচ্ছন্নতার কাজ করেও স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য রাতে ডিম বিক্রি করেন। এতে উনার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পায়। এতে বুঝা যায় ভালোবাসা প্রকাশের জন্য টাকার প্রয়োজন নয়, বরং মন-মানসিকতা ভালো থাকতে হয়।
“নবীন এক শিক্ষার্থী জানান,” আমি ভার্সিটিতে আসার পূর্বে সবুর খান স্যারের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প শুনে অনেক অনুপ্রাণিত হই। এখানে এসে আজ কয়েক দিনেই দেখলাম, এখানকার পরিবেশটাই উদ্যোক্তাদের সহযোগী। এখানে শিক্ষার্থীরা যেমন ছোট খাটো নানা ব্যবসা করছে ভার্সিটির ভিতরে স্টার্ট আপ মার্কেটে ও বাহিরে আশেপাশে। তেমনী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর্মী তাজুল ভাই ও ডিম বিক্রি করে বউয়ের চিকিৎসার ভার বহন করছে। এগুলো সত্যিই অনুপ্রেরণা মূলক। আমি বলব ভার্সিটিকে শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্ত হওয়ার সহযোগিতার পাশাপাশি, আমাদের এসব ভাইদেরও নানাভাবে সহযোগিতা করতে।