সিফাতুল ইসলাম : ক্রিকেট খেলার দীর্ঘতম সংস্করণ ও সর্বোচ্চ মানদণ্ডরূপে বিবেচিত হয় টেস্ট ক্রিকেট। ক্রিকেটবোদ্ধাদের কাছে প্রকৃত ক্রিকেট হিসেবে এটি পরিচিত। এটি সাধারণত কোন একটি ক্রিকেট দলের খেলার সক্ষমতা যাচাইয়ের প্রধান মানদণ্ডরূপে বিবেচনায় আনা হয়। সৃষ্টির শুরু হতেই টেস্ট ক্রিকেট বিভিন্ন দেশের মধ্যে তৈরি করেছে বন্ধুত্ব। তাইতো ক্রিকেটকেই বলা হয় ভদ্রলোকের খেলা। কেননা ক্রিকেট হলো নিয়ম ও শৃঙ্খলায় বন্দী একটি খেলা যা প্রতিটা ক্রিকেটারই শ্রদ্ধার সহিত মান্য করে । আর এই ক্রিকেটের সূচনা হয় টেস্ট ক্রিকেটের মাধ্যমে। আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত প্রথম টেস্ট খেলাটি ১৫-১৯ মার্চ, ১৮৭৭ তারিখে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ঐ খেলায় অস্ট্রেলিয়া দল ৪৫ রানে বিজয়ী হয়েছিল। টেস্ট ক্রিকেটের ১০০ বছর পূর্তিতে মেলবোর্নে ১২-১৭ মার্চ, ১৯৭৭ তারিখে আয়োজন করা হয় প্রথম টেস্টের মতই আরেকটি ম্যাচ সেখানেও অস্ট্রেলিয়া একই ব্যাবধানে জয়লাভ করে।

বিশ শতকে একদিনের আন্তর্জাতিক খেলা শুরু হবার পূর্বে টেস্ট ছিল ক্রিকেটের একমাত্র ধরন। তাইতো এই খেলাকে মানুষ অনেক মনোযোগ নিয়ে দেখে থাকে বিশেষত ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াতে সবথেকে বেশি দেখা যায়। সাধারণত একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও ছোট ফর্মেটের টি-২০ ম্যাচের সাথে টেস্টের পার্থক্য অনেক হয়ে থাকে। ক্রিকেটের ছোট ছোট সংস্করণ আসায় অনেকেই ৫ দিন ব্যাপি টেস্ট ম্যাচ দেখতে এখন তেমন আর আগ্রহ দেখায় না। তাইতো টেস্টের আমেজ পুনরায় ফিরিয়ে আনতে আইসিসি আয়োজন করেছে প্রথম বারের মত টেস্ট চ্যাম্পিয়শীপের । দুই বছর ব্যাপি এই লম্বা আয়োজন মূলত অন্যান্য গতানুগতিক প্রতিযোগীতার মত নয় বরং এর প্রতিটা ম্যাচই হয় দ্বিপাক্ষিক সিরিজের মাধ্যমে। আইসিসি হতে টেস্ট স্বীকৃতি প্রাপ্ত ১২ টি দেশের মধ্যে ৯ টি দেশের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হয়েছে এই প্রতিযোগীতা। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্ক কে নিয়ে গঠিত এই বৃহৎ প্রতিযোগীতা শুরু হয় ২০১৯ সালের ১ আগস্ট অ্যাশেজ এর মাধ্যমে যেখানে অংশগ্রহণ করে অস্ট্রেলিয়া ও স্বাগতিক ইংল্যান্ড। দীর্ঘ ২ বছর ব্যাপি এই মহা আয়োজনের ফাইনাল হবে ২০২১ সালের ১৪-১৮ জুন। ২,৩,৪ ও ৫ ম্যাচের দ্বিপাক্ষিক সিরিজে বিভক্ত ক্রিকেটের এই মহা আয়োজন। সিরিজে ম্যাচের সংখ্যার ভিত্তিতে বিভক্ত করে দেওয়া হয়েছে পয়েন্ট বিন্যাস এবং পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দল অংশগ্রহণ করবে ঐতিহাসিক লর্ডসের সেই ফাইনালে।

ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে এই বিশ্ব আসরের অনেক ম্যাচই যেখানে সর্বোচ্চ পয়েন্ট নিয়ে এখন পর্যন্ত শীর্ষে অবস্থান করছে ভারত। মোট ৭ টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করে সবগুলোতে জিতে ৩৬০ পয়েন্ট নিয়ে একে অবস্থান ২০১১ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। ১০ ম্যাচ খেলে ৭ টি জয় ও ২ টি হারে ২৯৬ পয়েন্ট নিয়ে এর পরেই অবস্থান করছে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। এর পরই রয়েছে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ৮ ম্যাচে ৪ জয় ও ৩ হারে তাদের পয়েন্ট ১১৬। ৪ ম্যাচে ১ জয় ও ২ হারে ৮০ পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে ৪ ও ৫ এ অবস্থান করছে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এই তালিকার ৬ নম্বরে অবস্থান করছে ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপের রানারআপ দল নিউজিল্যান্ড, ৫ ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ১ জয় ও বাকি ৪ টি তে হেরে তাদের মোট পয়েন্ট ৬০। নিউজিল্যান্ডের পরেই রয়েছে সাম্প্রতিক বাজে ফর্মে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা। ৬ ম্যাচে একমাত্র জয় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। বাকি ৫ টি তেই হেরে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে ৭ নম্বরে রয়েছে দলটি। এবং সবশেষ সমান দুইটি করে ম্যাচ খেলে উভয়টিতে হেরে ০ পয়েন্ট নিয়ে ৮ ও ৯ এ অবস্থান করছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশ। ক্রিকেটের এই লম্বা আয়োজনে প্রতিটি দলই মোট ৬ টি করে সিরিজে অংশগ্রহণ করবে যেখানে প্রতিটি সিরিজের মোট পয়েন্ট থাকবে ১২০। এই পয়েন্ট সিরিজের ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হবে যেমন ২ ম্যাচের সিরিজের প্রতি ম্যাচের জন্য পয়েন্ট থাকবে ৬০ করে। পক্ষান্তরে ২,৪ ও ৫ ম্যাচ সিরিজে প্রতি ম্যাচের জন্য পয়েন্ট থাকবে যথাক্রমে ৪০, ৩০ ও ২৪ করে। এছাড়াও কোন ম্যাচ টাই অথবা ড্র হলে উভয়ের জন্য রয়েছে আলাদা পয়েন্ট যা প্রতি ম্যাচের মোট পয়েন্টের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়। ক্রিকেটের এই আয়োজনই মূলত টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি সাধারণ দর্শকদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে তোলা কেননা টেস্ট হলো ক্রিকেটের সেই সংস্করণ যার মধ্য দিয়েই শুরু হয় ভদ্রলোকের এই খেলার ।
