অভিযোগ করে মেজর বলেন, সরকার ‘নিয়ম মানার প্রয়োজন নেই’ বলে বোধ করেছে। জনসন আইন ভেঙেছেন, মনে হয় তিনি বিশ্বাস করেন যে, নিয়ম তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। রাজনীতিতে তিনি একটি অনাস্থার পরিবেশ তৈরি করছেন, যা দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাজ্যের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য হুমকিস্বরূপ।
লন্ডনে এক বক্তব্যে জনসনের এই তীব্র সমালোচনা করেন মেজর। নিয়ম ভঙ্গ করার কথা অস্বীকার করে জনসন যে সমস্ত অজুহাত দেখিয়েছেন তা ‘অবিশ্বাস্য’ বলেও নিন্দা করে মেজর বলেছেন, এতে করে রাজনীতিতে জনগণের আস্থা নষ্ট হচ্ছে।
সরকারের আচরণের কারণে বহির্বিশ্বেও যুক্তরাজ্যের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে জনসন এমন অভিযোগ স্পষ্টতই সত্য না বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ জনসমাগমের ১২ টি ঘটনা নিয়ে এখনও তদন্ত চালাচ্ছে। তার মধ্যেই জন মেজর লকডাউনের মধ্যে জনসনের ডাউনিং স্ট্রিটের পার্টি নিয়ে এমন কড়া সমালোচনা করলেন।
ওদিকে, পোল্যান্ড সফরে থাকা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন এই সমালোচনা নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের তিনি কেবল বলেন, “সময়মত এইসব বিষয় নিয়ে আমার অনেক কথাই বলার থাকবে।”
ডাউনিং স্ট্রিট পার্টি নিয়ে পুলিশি তদন্ত শেষ হওয়ার পর এ নিয়ে অনেক কথাই বলবেন জানিয়ে জনসন বলেন, এখন তিনি ইউক্রেইন সীমান্ত পরিস্থিতির দিকে মনোনিবেশ করেছেন।
২০২০ সালের মে মাসে সারা দেশে লকডাউনের মধ্যে ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে মদের পার্টির আয়োজন হয়, যা ফাঁস হলে গত বছরের শেষ দিকে তুমুল সমালোচনায় পড়েন জনসন।
পার্টি নিয়ে জনসন নানা ধরনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কোনও নিয়ম লঙ্ঘন করেননি বলে পার্লামেন্টে তিনি দাবি করেছিলেন। আবার তার আগে জনগণের কাছে তিনি ক্ষমাও চেয়েছিলেন।
ডাউনিং স্ট্রিটের বাগান এবং কার্যালয়ে একাধিক পার্টি এবং তার কোনও কোনোটিতে খোদ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উপস্থিত খবর নিয়ে গত বছরের শেষ দিকে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমে শোরগোল শুরু হয়।
বিষয়গুলো তদন্তের জন্য গত ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের কেবিনেট সেক্রেটারি সিমন কেইসকে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী জনসন।
কিন্তু কেবিনেট অফিসেই সেরকম একটি আয়োজন হয়েছিল- এমন ইঙ্গিত মেলার পর সিমন কেইস তদন্ত থেকে সরে দাঁড়ান এবং আরেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সু গ্রেকে তদন্তের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়।
সু গ্রের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড বিধিভঙ্গের এসব ঘটনার মধ্যে আটটি আলাদা তারিখের ১২টি ঘটনার বিষয়ে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ তদন্ত করছে।
বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও চাপের মুখে জনসনের দল কনজারভেটিভ পার্টির বেশ কয়েকজন এমপি-ও তার তার পদত্যাগ দাবি করেন। তারা দলের প্রধানের কাছে জনসনের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে চিঠিও দেন।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জন মেজরও লন্ডনে তার বক্তব্যে জনসনকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য এমপিদেরকে প্রচ্ছন্ন আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “পার্লামেন্টে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলাটা রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য খুবই গুরুতর একটি বিষয় এবং সেটি সবসময় সেরকমই থাকতে হবে।”
“১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রী ও তার কর্মকর্তাারা লকডাউন আইন ভেঙেছেন। বেহায়ার মতো মনগড়া সব অজুহাত খাড়া করা হয়েছে। দিনের পর দিন জনগণকে অবিশ্বাসীদেরকে বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে।”
“আমাদের গণতন্ত্রের নির্বাচিত একটি অংশে আস্থার অভাবকে গ্রাহ্য না করে চলা যায় না। এটি ঠিক করা পার্লামেন্টের কর্তব্য। তা যদি না হয় এবং দেশে আস্থা হারিয়ে যায়, তাহলে আমাদের রাজনীতি ভেঙে পড়বে।”