ওই গবেষণাপত্রের বরাতে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এভারেস্ট চূড়ায় এভাবে হিমবাহ গলে যাওয়া বড় ধরনের বিপর্যয়ের সংকেত। বিশ্বের ১৬০ কোটি মানুষের খাবার পানি, সেচের পানি, জলবিদ্যুত উৎপাদনের স্রোত- সব ওই হিমবাহ গলা পানি থেকেই আসে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সাউথ কোল হিমবাহে যে বরফ জমাট বাধতে দুই হাজার বছর সময় লেগেছে, তা মাত্র ২৫ বছরে গলে গেছে। যার অর্থ হল, জমাট বাধার তুলনায় ৮০ গুন দ্রুত গলেছে বরফ।
বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী নেচার পোর্টফোলিও জার্নাল ক্লাইমেট অ্যান্ড অ্যাটমসফেরিক সায়েন্সে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে গবেষকেরা দাবি করেছেন, হিমবাহ গলার বিষয়ে অনেক গবেষণা হলেও বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়ার হিমবাহগুলোর বিষয়ে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
২০১৯ সালে বিজ্ঞানী ও পর্বতারোহীদের একটি দল সাউথ কোল হিমবাহে যান, তাদের মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব মেইনের ছয়জন ছিলেন। একটি ১০ মিটার দীর্ঘ বরফ খণ্ড থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন তারা।
তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের জন্য এরপর বিশ্বের উচ্চতম স্থানে দুটি স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশনও তারা স্থাপন করেন। মানুষের নাগালের সবচেয়ে দূরে থাকা হিমবাহ মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কতটা প্রভাবিত হচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করেছেন তারা।
অভিযাত্রী দলের প্রধান ও ইউনিভার্সিটি অব মেইনের ক্লাইমেট চেইঞ্জ ইনস্টিটিউটের পরিচালক পল মায়েওয়াস্কি বলেন, “প্রশ্নের উত্তরটি হচ্ছে- হ্যাঁ, প্রভাবিত হচ্ছে। এবং ১৯৯০ এর পর থেকে উল্লেখযোগ্য হারে এই প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।”
গবেষকরা বলছেন, মানবসৃষ্ট কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখরে পড়ছে এবং এটা যে বরফাচ্ছাদিত পৃষ্ঠের ভারসাম্য নষ্ট করছে, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত।
হিমবাহের বরফ একবার উন্মুক্ত হয়ে পড়লে সেখান থেকে ৫৫ মিটার উঁচু বরফের মজুদ মাত্র ২৫ বছরেই গলে যায়। গবেষকেরা বলছেন, ওই হিমবাচের বরফ সম্ভবত ১৯৫০ এর দশক থেকে গলতে শুরু করেছে, কিন্তু ১৯৯০ এর পর তা অতি দ্রুত গলছে।
হিমবাহের এই বরফ গলার প্রভাবে আর্দ্রতার মাত্রা এবং ঝড়ো হাওয়ার ধরনে পরিবর্তন আসতে পারে। ওই হিমবাহের বরফ গলা পানির ওপর যে জনগোষ্ঠী নির্ভরশীল, তাদের টিকে থাকাও ভবিষ্যতে হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন গবেষকরা।
২০১৯ সালের ওই অভিযাত্রায় তিনটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড হয়। সবচেয়ে উঁচু স্থান থেকে ৮ হাজার ২০ মিটার উচ্চতায় বরফ খণ্ড সংগ্রহ, ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৪৪০ মিটার উচ্চতায় মাইক্রোপ্লাস্টিক খুঁজে পাওয়া এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৪৩০ মিটার উঁচুতে আবহাওয়া স্টেশন স্থাপন করা।
আবহাওয়া স্টেশনগুলো ‘ডেথ জোন’ হিসেবে পরিচিত অঞ্চলে স্থাপন করা প্রথম আবহাওয়া স্টেশন। সাধারণ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার মিটারের বেশি উঁচু এলাকাকে ‘ডেথ জোন’ বলা হয়, কারণ ওই উচ্চতায় চড়া খুবই বিপদজনক এবং অক্সিজেনের পরিমাণও খুব কম থাকে সেখানে।