ময়মনসিংহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি ঘোষণার পর আন্দোলনের অন্দরমহলে দেখা দিয়েছে অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন। শহরের নেতৃত্ব দেওয়া ৮ গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় জেলা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া হয়, যা সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে আরও উস্কে দিয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য ঘোষিত ১৮৭ সদস্যের জেলা এবং ১৩৮ সদস্যের মহানগর কমিটিকে ‘অন্যায্য এবং পক্ষপাতদুষ্ট’ আখ্যা দিয়ে পদত্যাগ করেছেন একাধিক নেতা। তাদের মধ্যে রয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক তানজিয়া নাজনীন নীতু, সংগঠক আহসান উল্লাহ, কাওসার হাসান রিয়াদ, সদস্য আতিক হাসান, সৈয়দ সাইদুল, মহানগর কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব তানজিনা ইমি, সদস্য মির্জা সুলতানা আফরিন এবং উম্মে হাবিবা।
পদত্যাগী নেতাদের দাবি, নতুন কমিটিতে আন্দোলনের মূল চেতনা ও আদর্শকে গুরুত্ব না দিয়ে এমন কিছু ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যারা বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক জি কে ওমর বলেন, “কমিটি ঘোষণায় সঠিক নেতৃত্বকে উপেক্ষা করে অভ্যুত্থানের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। আন্দোলনের সময় যারা শহরে নেতৃত্ব দিয়েছিল, তাদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়নি।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আদর্শ ধারণ না করে অপকর্মে জড়িত, তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত শহরের আন্দোলনকর্মীদের হতাশ করেছে।”
পদত্যাগ করা নেত্রী মির্জা সুলতানা আফরিন বলেন, “নীতিহীনতার পথে হাঁটছে কিছু মানুষ। সংগঠনের প্রয়োজনের সময় আমরা জীবনবাজি রেখে কাজ করেছি, কিন্তু এখন সুযোগ-সন্ধানীরা নেতৃত্বে আসতে মরিয়া। তাই আমরা পদত্যাগ করেছি। তবে আমরা সবসময় ন্যায়ের পক্ষে থাকব।”
সদ্য ঘোষিত ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সদস্যসচিব আলী হোসেন এই পদত্যাগকে ‘উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “নতুন কমিটির প্রতি ময়মনসিংহের মানুষ ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। আমাদের কার্যক্রম শহীদ সাগরের কবর জিয়ারত দিয়ে শুরু হয়েছে। যারা পদত্যাগ করেছেন, তারা বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন।”
এমন সংকটের মধ্যে আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের প্রতি আস্থা জানিয়ে পদত্যাগী নেতারা আশাবাদ প্রকাশ করেছেন যে, বিতর্কিত কমিটি পুনর্বিবেচনা করা হবে।
ময়মনসিংহের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই সংকট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। সংগঠনের অভ্যন্তরীণ সংঘাত তাদের আদর্শিক ভিত্তি কতটা টিকিয়ে রাখতে পারবে, তা সময়ই বলে দেবে।