শনিবার, অক্টোবর ১২, ২০২৪

ডিভোর্সের পর কীভাবে সামলাবেন নিজেকে?

প্রকাশ :

অনেক স্বপ্ন দিয়ে সাজানো সংসার। নিজের পছন্দ করা পাত্রকে বিয়ে হোক বা পরিবারের পছন্দে চার হাত এক— কিছু দিন একসঙ্গে কাটানোর পর বিবাহবিচ্ছেদের ঝড়টা প্রায় সব সম্পর্কেই সমান প্রভাব ফেলে।

দুইজনে মিলে খুব ঠাণ্ডা মাথায় ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিলেও সেই সিদ্ধান্তে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কষ্টটা থাকেই। সঙ্গীর ইচ্ছায় হঠাৎই ডিভোর্সে বাধ্য হলে তখন অপ্রস্তুতির জন্য মনের চাপ বেড়ে যায় অনেকটাই। বিশেষ করে দিনের শেষে ঘরে ফিরে শূন্য ঘর ভাবলেই আঁতকে উঠতে হয়।

কখনো কখনো দেখা যায়, দুইজনের তিক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে ডিভোর্স ছাড়া উপায় থাকে না। 

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, অনেকেই ভেবে থাকেন, আইনগত ভাবেই বিষয়টা জটিল, পদ্ধতিটি সারা হয়ে গেলে অনেকটাই ঝাড়া হাত-পা দুই জনে। এই ধারণাটাই ভুল। বরং বেশির ভাগ সময়ে দেখা যায়, ডিভোর্স যে উপায়েই হোক না কেন, আর যে যে কারণেই হোক না কেন, ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর নিজেকে সামলাতে অনেকটাই সময় লাগছে। আসলে কোনো একটি সম্পর্কে থাকা আর হঠাৎই তা না থাকা, হয়ে যাওয়ায় তফাৎ আছে অনেক। তাই নিজেকে সামলাতে না জানলে ডিভোর্সের রেশ কেটে যাওয়ার পর পরই অসহায়তা আর একাকীত্ব বোধ করতে পারেন।

ডিভোর্সের আগে তাই খুব ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্তে আসা জরুরি। যদি ডিভোর্স নেয়াই একমাত্র সমাধানের পথ হয়, তা হলে মনকেও সেই ভাবে তৈরি করাটা দরকার। হঠাৎ ডিভোর্সের খবর পাওয়ার পর তা মেনে নিতে হলেও চাই মনের যত্ন। এই ধাক্কা সামলাবেল কী করে?  জানাচ্ছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।

মাথা ঠান্ডা রাখুন: মাথা ঠান্ডা রাখাই ডিভোর্স সামলানোর প্রথম ধাপ। ভেঙে পড়লে তার রেশ সামাজিক ও পেশাগত জীবনেও পড়বে। তাই প্রথমেই মনকে বোঝান, যে মানুষ আপনার সঙ্গে থাকতে চাইছেন না, তাকে জোর করে আঁকড়ে ধরে রাখায় কোনো কারণ নেই। ভুল বোঝাবুঝি থেকে সঙ্গী কোনো চরম সিদ্ধান্তে পৌঁছলে অবশ্যই মুখোমুখি বসুন। আলোচনা করুন। কিন্তু তাতে কাজ না হলে ভেঙে পড়বেন না। এই সময় মন ভালো রাখা কঠিন, তবু বিষাদকে খুব চেপে বসতে দেওয়া যাবে না। তাই মনের সঙ্গে শরীরকেও রাখতে হবে চাঙ্গা। দরকারি পরীক্ষাগুলো সময়ে করান। অভ্যাসের শরীরচর্চা বন্ধ করে দেবেন না, এতেও মনে চাপ পড়ে। যে সব সঙ্গ আপনাকে বার বার পুরনো কথা মনে করায় বা ডিভোর্সের প্রসঙ্গে নানা কথা বলে, তাদের সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন কয়েকটা দিন।

এই সময় মন ভাল রাখা কঠিন, তবু বিষাদকে খুব চেপে বসতে দেওয়া যাবে না।

স্মৃতি এড়ান: পুরনো উপহার, বিয়ের চিহ্ন এগুলো কষ্ট দিলে সে সব কিছু দিনের জন্য সরিয়ে ফেলুন অন্যত্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শোক সামলানোর পর সামনে আনুন সে সব। কেন সম্পর্ক টিকল না তা ভাবুন, ভুল থেকে শিক্ষাও নিন। কিন্তু সে সব পোস্টমর্টেম করতে বসে অনিচ্ছুক সঙ্গীকে ঘন ঘন ফোন বা টেক্সট একেবারেই নয়।

সাহসী হোন: মনে মনে সাহসী হতেই হবে। অন্যের বাঁকা কথা বা ইঙ্গিতের উপযুক্ত জবাব দিন। কাছের মানুষরা ছাড়া আর কেউ যেন আপনার ভিতরের ক্ষত বুঝতে না পারেন। সকলের কাছে নিজের মনের অবস্থা প্রকাশ করতে গেলে বার বার দুঃখের প্রসঙ্গগুলো উঠে আসবে যা মনের জন্য ভাল নয়। এ ছাড়া অনেকেই আপনার নরম অবস্থার কথা জেনে আঘাত করতে পারেন।

নিজের যত্ন: আপনারই প্রথম ডিভোর্স হচ্ছে না, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে অনেকেই গিয়েছেন। তাই নিজেকে কোনও ভাবে কষ্ট দেবেন না। নিজের সিদ্ধান্তে ডিভোর্স করলেও অনেক সময় পুরনো সুখের দিনগুলো ঘুরেফিরে এসে কষ্ট দেয়। এই সময় বরং নিজেকে একটু ব্যস্ত করে ফেলুন। নিজের কোনও শখ ঝালিয়ে নিতে শুরু করুন নিজের মতো করে। মন খুব অশান্ত হলে লিখে ফেলুন মনের সব কথা। কাউকে দেখানোর দরকার নেই। এক সময় মন শান্ত হয়ে এলে ইচ্ছে করলে সে সব আর না-ও জমিয়ে রাখতে পারেন। অন্য কিছু ভাল লাগলে শুরু করুন তা। কোনও সংস্থার সঙ্গে জড়িত থেকেও সাংস্কৃতিক চর্চা করতে পারেন। একান্তই সে সবে মন না থাকলে খুব কাছের বন্ধু বা পরিজনদের সময় দিন। বেড়িয়ে আসুন কোথাও। বাইরে খেতে যান। কেনাকাটা করুন। মোদ্দা কথা, মন একটু অন্য দিকে থাকে এমন কাজে ব্যস্ত রাখুন নিজেকে।

সন্তানের যত্ন ও নিরাপত্তার দায়িত্ব নিন দুজনেই।

সম্পর্কের জন্য ব্যস্ততা নয়: ডিভোর্স হল মানেই নতুন সম্পর্ককে এখনই খুঁজে বার করে ফেলতে হবে, এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। একা থাকতে পারেন না বলেই এমনটা হচ্ছে, নইলে একটা সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন সম্পর্ক— এমনটা সব সময় হয় না। এতে বরং প্রেমের বদলে একটা আঁকড়ে ধরার, অবলম্বন খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছে কাজ করে। তাই নতুন সম্পর্কে জড়ানোর আগে নিজেকে কিছুটা সময় দিন। কোনও নতুন মানুষ জীবনে এলেও কিছুটা সময় দিন আগে নিজেকে। শান্ত হয়ে আসার পরেও যদি সেই মানুষটির সঙ্গে ভাল লাগে, প্রয়োজনীয় মনে হয়, তবেই এগোন।

সন্তানের দিক ভাবুন: ডিভোর্সের পর সন্তান কার কাছে থাকবে এ নিয়ে জলঘোলা কম হয় না। নানা সময় এর প্রভাব এত তিক্ত হয় যে সন্তান নিজেকে অপ্রয়োজনীয় ভাবতে শুরু করে। নিজেরা ডিভোর্স করলেও সন্তানের কথা প্রথম থেকে ভাবুন। চেষ্টা করুন ওর কথা ভেবে আর একটু মানিয়েগুছিয়ে একসঙ্গে থেকে যাওয়া যায় কি না। সেটা একান্তই না পারলে প্রথম থেকেই একসঙ্গে মিলে ঠিক করুন, সন্তান কার কাছে থাকবে। অবশ্যই সন্তানের মতামত তথা ইচ্ছেটাও জানুন। চেষ্টা করুন বাকি জীবনটা তার সঙ্গ ও দায়িত্ব দু’জনেই ভাগ করে নিতে। সন্তানের প্রশ্নে একেবারেই ইগোকে সামনে আনবেন না।

আর্থিক দিক: আইনগত ভাবে আর্থিক ভাগ বাঁটোয়ারার পথ তো রইলই, তা ছাড়াও যদি আর্থিক দিক থেকে পরনির্ভরশীল হন, তা হলে নিজের খরচে রাশ টানুন। যে সব খরচ আগে অতিরিক্ত ছিল, সে সব ছেঁটে ফেলুন। বরং সেই টাকা ব্যয় করে এমন কিছু শিখে ফেলুন, যা আপনাকে আনন্দও দেবে আবার কিছুটা আত্মনির্ভরশীল হতে শেখাবে।

সূত্র: আনন্দবাজার
 

আরও পড়ুন

মন্তব্য করুন

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

spot_imgspot_img

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

কোটিপতি হলেই কি সম্পদের সারচার্জ দিতে হবে?

মোঃ আতিকুল্লাহ সরকার,বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস সম্পদের সারচার্জ হল একটি অতিরিক্ত কর যা বিত্তবান বা উল্লেখযোগ্য সম্পত্তি সম্পন্ন...

দেশে প্রথম উপস্থাপনা নিয়ে রিয়েলিটি শো’র চ্যাম্পিয়ন ড্যাফোডিলের জয়া

মমতাজ হারবাল প্রোডাক্টস এর সার্বিক সহযোগিতায় এনটিভি আয়োজিত ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতা ‘আলো ছড়াবে উপস্থাপনায়’। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের...

পাবিপ্রবিতে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে ছাত্রীর আত্মহত্যা

পাবিপ্রবি প্রতিনিধি: পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাস দিয়ে আত্নহত্যা করেছে। ঐ...

বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথমবার শেখ ফরিদ পলক; ফাস্ট লুকেই বাজিমাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রকাশ পেয়েছে ‘জয় বাংলা ধ্বনি’ সিনেমার তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেতা শেখ ফরিদ পলকের ফার্স্ট লুক। শুক্রবার...

পাবিপ্রবির বিআরটিসি বাস ভাঙচুর, আহত ১

দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের ডাকা চলা টানা ৪৮ ঘন্টার হরতালে ভাঙচুর করা হয়েছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি)...

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

পাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি, আহত ২

নবীনবরণের অনুষ্ঠান কেমন হবে এ নিয়ে প্রথমে কাটাকাটি, এরপর...

ঢাবিতে আন্তর্জাতিক ইয়োগা দিবস উদযাপিত

ঢাবি প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ইয়োগা দিবস ইয়োগা...

ফেসবুকে লিখলেন ‘বিদায়’ কয়েকঘন্টা পরই মৃতদেহ উদ্ধার ঢাবি শিক্ষার্থীর

ঢাবি প্রতিনিধি সন্ধায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে 'বিদায়' শিরোনামে ভাঙা...

বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীর আত্নহত্যা

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও...