তবে যে শিক্ষার্থীরা করোনাভাইরাসের টিকার দুটি ডোজ নিয়েছে, আপাতত কেবল তারাই ক্লাসে যাবে। যারা দুই ডোজ টিকা নেয়নি, আপাতত তারা বাসায় থেকে অনলাইনে বা টেলিভিশন দেখে ক্লাস করবে।
আর প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরতে আরও অপেক্ষায় থাকতে হবে। যেহেতু ১২ বছরের কম বয়সীরা টিকা পায়নি, সেহেতু ২২ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরানো হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার ইতোমধ্যে ১২ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে হয়ত তা আরও কমে ‘সেই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায়’ নেমে আসবে, যাতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ও খুলে দেওয়া যায়।
১২ বছরের কম বয়সীদের কীভাবে টিকার আওতায় আনা যায়, সে বিষয়টিও সরকার বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছেন দীপু মনি।
কোভিড মহামারীর কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে সব স্কুল-কলেজ খুলে দিয়েছিল সরকার। পরে ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও খুলেছিল।
কিন্তু করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে এ বছরের শুরু থেকে সংক্রমণ ফের বাড়তে শুরু করলে গত ২১ জানুয়ারি ফের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা আসে। এরপর ছুটি বাড়তে বাড়তে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে।
বুধবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে জাতীয় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি মত দেয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার কমে আসায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন খুলে দেওয়া যায়।
ওমিক্রনের দাপটে জানুয়ারির শেষ দিকে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৬ হাজারও ছাড়িয়েছিল, শনাক্তের হার পৌঁছেছিল ৩৩ শতাংশের রেকর্ড উচ্চতায়। এখন শনাক্ত রোগী ৪ হাজারের নিচে নেমেছে, শনাক্তের হার নেমে এসেছে ১৩ শতাংশের নিচে।
এ পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বুধবার মহামারী মোকাবেলার বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসে শিক্ষার নীতি-নির্ধারকরা, যাতে ভার্চুয়ালি যোগ দেন মন্ত্রী দীপু মনি।
বৈঠক শেষে কোভিড পরামর্শক কমিটির সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১২ বছর বা তার বেশি বয়সী বাচ্চারা যারা দুই ডোজ টিকা নিয়েছে, তাদের এখন স্কুলে যেতে কোনো বাধা নেই। ১২ বছরের কম বয়সীরা এখন স্কুলে যেতে পারবে না, কারণ তারা দুই ডোজ টিকা নেয়নি।”
বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ১ কোটি ২৮ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৪ লাখ ৪০ হাজার ৪৪৮ জন ইতোমধ্যে কোভিড টিকার দুই ডোজ পেয়েছে।
তিনি বলেন, ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ‘প্রায় সকলেই’ প্রথম ডোজ পেয়েছে। সেই সংখ্যা ১ কোটি ২৬ লাখ ৫৭ হাজার ২২২ জন।
২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রায় সবার দুই ডোজ টিকা নেওয়া হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন দীপু মনি।মাঝে স্কুল খুলেছিল, তবে ২১ জানুয়ারি থেকে তা রয়েছে বন্ধ। ফাইল ছবিআগের রুটিনে ক্লাস
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জানুয়ারিতে যে অবস্থায় শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বন্ধ হয়েছে, সেই জায়গা থেকেই পাঠদান শুরু হবে।
“আমাদের ক্লাসের সংখ্যা যে রকম ছিল, আমরা এখন শুরু করব সেই জায়গায়। তারপরে আমরা চেষ্টা করব সেই সংখ্যাকে পরিস্থিতি সাপেক্ষে বাড়িয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার।”
সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারিতে বন্ধের আগ পর্যন্ত একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রতিদিনই ক্লাস হত। আর পাঠদান হত তিন বিষয়ের।
৩০ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর মাধ্যমিক স্তরে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় সর্বশেষ নির্দেশনা দেয়।
সেখানে বলা হয়েছিল-
>> ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে প্রতিদিন চারটি বিষয়ের ক্লাস নিতে হবে
>> দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে প্রতিদিন তিনটি বিষয়ের ক্লাস নিতে হবে
>>অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে ২ দিন তিনটি বিষয়ের ক্লাস নিতে হবে
>> ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে ১ দিন তিনটি বিষয়ের ক্লাস নিতে হবে
>> প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির কার্যক্রম প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসারে পরিচালনা করতে হবে
>> স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম চলমান রাখবে।