মোঃ আল আমিন, বেরোবি প্রতিনিধি
কথায় আছে,আগে দর্শনধারী পরে গুণ বিচারী।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর হাজার হাজার গুণ থাকলেও তার দর্শনধারী নিয়ে শিক্ষার্থীদের এক বিশাল হতাশা কাজ করে।
রংপুর এর বেগম রকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় দেড় যুগ কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত নির্মিত হয়নি মূল ফটক বা মেইন গেইট।যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার বলে আসছে খুব দ্রুত মূল ফটক নির্মানের কাজ শুরু হবে।
তবে সেই কথার কোন বিশ্বাস যোগ্যতা সাধারন শিক্ষার্থীর কাছে নেই। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে এই একই কথা জানিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় এর সাধারন শিক্ষার্থীর দীর্ঘ আকাঙ্খা, প্রত্যাশার এক চাওয়া পাওয়ার নাম বিশ্ববিদ্যালয় এর মূল ফটক।
যদিও বর্তমান মাননীয় উপাচার্য ড. মুহাম্মদ হাসিবুর রশীদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক নির্মাণের ভিত্তি স্থাপন এবং নকশা উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধনের প্রায় ৮ মাস কেটে গেলেও বাস্তবায়িত হয়নি মূল ফটক নির্মাণের কাজ।
অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের মতামত, বরাবরই তাদের চাওয়া পাওয়াটা ছোট করে দেখা হয়। কেনো জানি শিক্ষার্থীদের সেই চাওয়া পাওয়াকে অনেকটা ছোট করে দেখে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমন মন্তব্য পাওয়া যায় শত শত শিক্ষার্থীদের মাঝে।
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী, সজীব আহমেদ শুভ বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্বতা প্রকাশ করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য কয়েক হাজারগুন বাড়িয়ে দেয়। আমাদের বহুদিনের আকাঙ্ক্ষা বেরোবিতে একটি সুন্দর গেট হবে। আশাকরি মাননীয় উপাচার্য মহোদয় খুব তাড়াতাড়ি আমাদের একটি গেট উপহার দিবেন।
বাংলা বিভাগের ১০ম ব্যাচ এর শিক্ষার্থী
মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান আহমেদ তারিক বলেন,বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ও উত্তরবঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ নামে খ্যাত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর । ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে গুটি গুটি পায়ে এক যুগেরও বেশি সময় অতিবাহিত করছে। কিন্তু অন্তত দুঃখজনক বিষয় হলেও চিরন্তন সত্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১০-১২ হাজার শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি মূল ফটক এখন অব্দি উপহার দিতে পারেনি। যদিও এর আগে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পড়ে সেই সময়ের সাবেক উপাচার্য ড. কলিমুল্লাহ স্যার মূল ফটকের নকশা সবার সামনে নিয়ে আসেন। কিন্তু তিনি নানা টালবাহানা ও নাটক করে সেই নকশার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। কাজের কোন অগ্রগতি শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরতে পারেন নাই।
বর্তমান উপাচার্য ড. হাসীবুর রশীদ স্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যভার হাতে নিয়ে গত ২০২২ সালের শেষের দিকে মূল ফটকের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এমনকি সংবাদমাধ্যমে জেনেছিলাম যে, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের মধ্যে মূল ফটকের কাজ শুরু হবে কিন্তু সেই আাশাও গুড়ে বালি।
মূল ফটক একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য, পরিচিতি, চিন্তা ভাবনা,মননশীলতা ইত্যাদি বহন করে থাকে। বর্তমান উপাচার্য ড. হাসীবুর রশীদ স্যার শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে যেমন নানা ক্ষেত্রে পরিবর্তন সূচনা করেছেন তেমনিভাবে খুব শিগগিরই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপযোগী, মানসম্পন্ন একটি চমৎকার দৃষ্টিনন্দন মূল ফটক শিক্ষার্থীদেরকে উপহার দিবেন বলে আমি আশা রাখি।
মার্কেটিং বিভাগের,১০ম ব্যাচ এর শিক্ষার্থী ইসতিয়াক আহমেদ খান বলেন,বেরোবির প্রধান ফটক বেরোবির শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ভালবাসার প্রতীক। এই ভালোবাসার প্রতিকটি সুপ্রতিষ্ঠিত হোক , খুব দ্রুত এর কাজটি শুরু হোক এবং নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়ে বেরোবির সৌন্দর্যকে পূর্ণতা দান করুক এই প্রত্যাশা বেরোবির প্রতিটি শিক্ষার্থীর। নানা কারণে এই বিষয়টি তে কালক্ষেপন করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আশা প্রত্যাশা আজ সংকীর্ণতায় জরাক্রান্ত। তাই প্রশাসনের কাছে এবং সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের শিক্ষার্থীদের আকুল আবেদন যত দ্রুত সম্ভব বেরোবির প্রধান ফটকের নির্মাণকার্য শুরু করা হোক এবং সম্পূর্ণ করে বেরোবির সৌন্দর্যকে পূর্ণতা দান করে, বেরোবির শিক্ষার্থীদের ভালবাসার প্রতিকটিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা হোক।
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ১১তম ব্যাচ এর শিক্ষার্থী মোঃ হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এর মূল ফটক প্রতিষ্ঠা করা আমাদের সকল শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় এর মূল ফটক, শিক্ষার্থীদের এই প্রাণের দাবি কে অনেকটা অবহেলা করে দেখা হয়।
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ১৩ তম ব্যাচ এর শিক্ষার্থী মোঃআবু রায়হান তামিম বলেন,প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পার হয়ে গেলেও বেরোবিতে মূল ফটক এখনো আমাদের কল্পনাতে রয়ে গেছে, বিষয় টি আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশার, প্রায়ই বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডার সময়ই শোনা যায় তাদের আক্ষেপ এর কথা,গত বছর মাননীয় উপাচার্য স্যার আনুষ্ঠানিক ভাবে এর উদ্বোধন করলেও ৭ মাস পেরিয়ে যাবার পরও কাজের কোনো অগ্রগতি দেখছি না আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ ১৪ ব্যাচ এর নবীন শিক্ষার্থী,আনিকা সামিহা নদী বলেন,পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর প্রায় সকলেরই ইচ্ছা থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সাথে, বাসের সাথে, অন্যান্য বিখ্যাত জাগয়ায় ছবি তুলবে। কিন্তু বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে ফটকের সামনে ছবি তোলার স্বপ্ন পূরণ হয়না কোনো শিক্ষার্থীরই। উত্তরবঙ্গের জনপ্রিয় বিদ্যাপিঠে কোনো মূল ফটক নেই, এই বিষয়টি আমাদের হতাশ করে বারবারই। মূল ফটক থাকা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।
এমন শত শত হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের কল্পনা জুড়ে আছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক বা মেনই গেট দেখার এক দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষা,বাস্তবায়ন হওয়ার আশায় প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা।