আজকাল মানুষের কিছু হলেই বলে উঠে, আমি অনেক ডিপ্রেসড। “ডিপ্রেশন” শব্দটা এখন অনেকটা ডাল-ভাতের মত হয়ে গেছে। প্রতিদিন যে সমস্ত কারণে আপনার হুট করে মন খারাপ হয় সেগুলো আসলে এনযাইটি। ডিপ্রেশন না!!!
বাবা-মা বকা দিয়েছে, প্রিয় মানুষের সাথে ঝগড়া হয়েছে, পছন্দের মানুষের কাছ থেকে পাত্তা পাচ্ছেন না, পড়াশোনা ঠিকমতো হচ্ছে না! এইসবের জন্য কি আপনার মন খারাপ হয়? এগুলো হচ্ছে দৈনন্দিন জীবনের দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, বাজে ভাবনা। আর এই সমস্ত ব্যাপারই হচ্ছে এনযাইটি। এনযাইটি হচ্ছে একটি সাময়িক মানসিক সমস্যা। বাবা-মা আবার স্নেহ করলে, প্রিয় মানুষের সাথে সুন্দর মুহূর্ত তৈরী হলে, পছন্দের মানুষের কাছ থেকে পাত্তা পেলে, পড়াশোনা ঠিক হলে আপনার আর এনযাইটি থাকবে না। এই সমস্য কারণে মুহূর্তে আপনার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয়ে যাবে। কিন্তু ডিপ্রেশন থেকে যায়। ডিপ্রেশন ধীরেধীরে মানুষের মাঝে প্রভাব বিস্তার করে এবং বসবাস করতে শুরু করে। প্রায় সকল প্রকার মানসিক সমস্যার রিক্স ফ্যাক্টর হচ্ছে ডিপ্রেশন। এমনকি দীর্ঘদিন একটা বিষয় নিয়ে এনযাইটিতে ভুগলে সেখান থেকে ডিপ্রেশন শুরু হতে পারে। ডিপ্রেশন মানুষের মাঝে তখনই শুরু হয় যখন সে বুঝতে পারে, ‘যে লক্ষ্যে তার পৌঁছার কথা ঐ লক্ষ্যে পৌঁছা তার পক্ষে সম্ভব না। যে জিনিসটা তার পাওয়ার কথা ঐ জিনিসটা পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। যে জিনিসটা সে জীবন থেকে হারিয়ে ফেলেছে ঐ জিনিসটা উদ্ধার করা সম্ভব না।’ যতক্ষণ পর্যন্ত একজন মানুষের মনে হবে আমি এই কাজটা পারবো কিংবা সফল হবো ততক্ষণ সেটা অন্তত ডিপ্রেশন না। সকাল বেলা ডিপ্রেসড হয়ে কখনো বিকাল বেলা মন ভালো করা যায় না। কারণ সেটা তো ডিপ্রেশন না।
ডিপ্রেশন মানুষের জীবন থেকে সকল আনন্দ কেড়ে নেয়। ডিপ্রেশন মানুষের চিন্তা করার শক্তি কেড়ে নেয়। ডিপ্রেশন মানুষের শারীরিক, মানসিক অবস্থা পাল্টে ফেলে। ডিপ্রশনের জন্য একজন মানুষকে দীর্ঘদিন মানসিক বিষাদে ভুগতে হয়। এমনকি মানুষ ডিপ্রেসড হয়ে নিজের জীবনকে আত্মত্যাগ করে। ডিপ্রেশন কোনো সহজ বিষয় নয়। নিজেকে অযথা ডিপ্রেসড দাবি করা মোটেও উচিত নয়। নিজেকে অযথা ডিপ্রেসড দাবি করলেও আপনি হয়তো কাছের মানুষ থেকে সহানুভূতি, যত্ন, ভালবাসা পাবেন এটা ঠিক। কিন্তু যদি কখনো সত্যিহ ডিপ্রেসড হয়ে পড়েন তখন আর সেইসব কাজে আসবে না। কারণ নিজের ডিপ্রেশন নিজেকেই মোটিভেট করতে হয়। অন্য কেউ সেটা মোটিভেট করতে পারে না কখনো। চেস্টার ব্যানিংটন সারাজীবন মানুষের ডিপ্রেশন নিয়ে গান গাইছে। অথচ সে নিজেই ডিপ্রেশনে ভুগে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে। অন্যের মোটিভেশন তোকে চেস্টারের গানের মত সাময়িক প্রশান্তি এনে দিতে পারে। কিন্তু নিজের ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি দিতে পারে না। নিজেকে অযথা ডিপ্রেসড দাবি করলে আপনাকে দেখে সত্যিকারের ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষটি আরো বেশী ডিপ্রেসড হয়ে যায়। তাই আপনি আপনার সমস্যাগুলো বুঝতে শিখেন, নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোর ছক কেটে ফেলেন। নিজেকে ভালো রাখতে চেষ্টা করেন। তাতে অন্তত দৈনন্দিন জীবনে এনযাইটির সৃষ্টি হবে না। ছোট ছোট বিষয় নিয়েও আমরা অযথা মন খারাপ করি। বলতে পারি, যুগের সাথে তাল মেলানোর জন্য ‘ডিপ্রেশন’।
এই আবেগজনিত মানসিক রোগ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্বপ্নটাও গণতান্ত্রিক হতে হবে। স্বপ্ন একটা দেখলে হবে না। বিকল্পও দেখতে হবে। হেলেন কেলারের মতো অন্ধ, বোবা, শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষ যদি ১৪টি বই লেখে পৃথিবীতে আলোচিত-সমালোচিত হতে পারেন, সফল হতে পারেন, তাহলে আমাদের মতো সুঠাম-সুস্থ দেহের অধিকারীরা কেন পারবো না। এই প্রশ্নটিই হোক আমাদের পাথেয়। ভালো থাকবেন। নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিবেন।
নাইম হাসান রিদয়
( জার্নালিজম মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্ট )
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।